সশস্ত্রবাহিনী যুক্ত হচ্ছে না আরপিওতে: চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদন কাল by সিরাজুস সালেকিন |

নির্বাচন পরিচালনা আইনে (আরপিও) তেমন বড় পরিবর্তন আনবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই মধ্যে ইসির আইন সংস্কার কমিটির ৩৫টি সুপারিশ থেকে বাছাই করে ২০ সুপারিশের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামীকাল কমিশন সভায় এ খসড়া অনুমোদন করা হবে। চূড়ান্ত খসড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্রবাহিনীকে যুক্ত করা হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বিএনপিসহ বড় কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করার দাবি রেখেছিল।
এ বিষয়ে আইন সংস্কার কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। কারণ, নবম সংসদ নির্বাচনের পর আরপিও সংশোধনীর সময় এটি বাদ দেয়া হয়েছিল। নির্বাচনের সময় চাইলে আমরা অন্য আইনে সেনা মোতায়েন করতে পারব।
তিনি বলেন, দুটি বিষয় ছাড়া আরপিও সংশোধনের খসড়া মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিষয় দুটি হচ্ছে, আগাম ভোটিং ও নির্বাচনী তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা। এ দুটি বিষয়ে নতুন কিছু করা যায় কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। ইসি সূত্র জানায়, খসড়া তালিকায় ২০টি আইন সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৭ (৫) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো জেলায় দুজন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা যেতে পারে। ৭ (৬) ধারায় বলা হয়, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিতে প্রত্যাহারের পাশাপাশি বদলি করা যাবে। ৮(২) ধারায় বলা হয়েছে, ২৫ দিন আগের স্থলে ভোটের ১৫ দিন আগে কেন্দ্রের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। ৯(১) ধারায় বলা হয়, তিন দিন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল উন্মুক্ত রাখতে হবে। ১২(১) (সি) ধারায় বলা হয়, ঋণখেলাপিদের জটিলতা কমাতে মনোনয়ন দাখিলের সাত দিন আগের পরিবর্তে দাখিলের আগের দিন তা পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হবে। ১২(৩) ধারায় বলা হয়, অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের বিধান যুক্ত করা। ১২(৩এ) (এ) ধারায় বলা হয়, স্বতন্ত্র প্রার্থিতার সুবিধার্থে নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ১%-এর পরিবর্তে এক হাজার ভোটার সমর্থন তালিকা জমার বিধান করতে হবে। ১২(৩এ)(সি) ধারায় বলা হয়, প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ১২ ডিজিটের টিআইএন সন দাখিল বাধ্যতামূলক করতে হবে। ১৩ (১)(এ) ধারায় বলা হয়, জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা যেতে পারে। ১৬(১) ও ১৯(১) ধারায় বলা হয়, বিদ্যমান বিধানকে সহজ করতে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থী হলে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা, সহজীকরণ করতে হবে। ২০ (এ) আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে ইভিএম ব্যবহারের জন্য নতুন বিধান সংশোধন করতে হবে। ২২(১) ধারায় বলা হয়, প্রার্থীদের সুবিধার্থে নির্ধারিত ফরমে পোলিং এজেন্ট নিয়োগে সংশোধনী আনতে হবে। ২২(৩) ধারায় বলা হয়, পোলিং এজেন্টকে প্রার্থীর প্রতীক সংবলিত কার্ড না দিয়ে ইসির পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। ৩১(১) ধারায় বলা হয়, ইভিএমে ভোট নিতে হলে এ অনুচ্ছেদেও সংশোধন আনতে হবে। ৩৯ (১) ও ৩৯ (২) ধারায় বলা হয়, এতে আরও দুটি অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনতে হবে। ৪৪বি (৬) ধারায় বলা হয়, নির্বাচনী ব্যয় সীমাবদ্ধ রাখা ও অবৈধ প্রভাব রোধে মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। ৪৪সি (৫) ধারায় বলা হয়, সময়ের বাস্তবতায় নির্বাচনী ব্যয় যথাসময়ে দিতে ব্যর্থ হলে ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা। ৪৪ই (২) ধারায় বলা হয়, সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যর্থ হলে সরাসরি বদলি করার বিধান করে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিতে সংশোধন করতে হবে। ৯১সি (৮) ধারায় বলা হয়, ভোটে কর্মকর্তাদের অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব, দল বা প্রার্থীর অনিয়ম, আচরণবিধি লঙ্ঘনে খোঁজ নিয়ে তৃতীয় চোখ নিয়োগ করা যেতে পারে।  ৯১(এ) এ ধারায় বলা হয়, নির্বাচনী অভিযোগ দাখিল ও নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে বিভিন্ন দেশে।
অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপনের বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে খসড়া তলিকায়। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে আইন সংস্কারের জন্য চার শতাধিক সুপারিশ আসলেও ইসি পোলিং এজেন্টরে বিধানসহ আইন সংস্কারের ২০টি সুপারিশ আমলে নিচ্ছে ইসি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী অন্তর্ভুক্ত করাসহ রাজনৈতিক দলের বড় বড় সুপারিশ বা এটা দিয়ে খসড়া প্রকাশ করতে যাচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ইসির সচিব হেললুদ্দীন আহমদ বলেন, কমিশন বৈঠকে খসড়ার জন্য ২০টি সুপারিশ বাছাই করা হয়েছে। কিছু সুপারিশের বিষয়ে কমিশন একমত না হওয়ায় ১২ই এপ্রিল আবার বৈঠক বসবে। সেদিন সব ঠিক থাকলে আইনের খসড়া প্রকাশ করবে ইসি।

No comments

Powered by Blogger.