ফের রাজপথে নেমেছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা

সরকারের দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে ফের রাজপথে নেমেছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। সরকারি আশ্বাস পাওয়ার দিনে বিভক্তি দেখা দিলেও গতকাল ফের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে   দিনভর বিক্ষোভ করার পর বিকালে বিভক্ত দুই অংশ যৌথভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়। সেখানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয়। আন্দোলন নিয়ে সংসদে দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলা হয় এই মন্ত্রীকে। এখন থেকে আর কোনো মন্ত্রীর বক্তব্য গ্রহণ করা হবে না উল্লেখ করে আন্দোলনকারীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পেলে প্রতি দিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত অবরোধ চলবে। সারা দেশের সব কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এদিকে গতকাল দিনভর মধুর ক্যান্টিন এলাকায় অবস্থান করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য হলে তা প্রতিহত করা হবে। দিনভর পাল্টাপাল্টি অবস্থান থাকলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে শিক্ষক সমিতি। সমিতির পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন ও ভিসি ভবনে হামলার নিন্দা জানানো হয়। গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ভিসি ভবন পরিদর্শন করে। এসময় ওবায়দুল কাদের জানান, হামলায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে গতকাল আন্দোলনে নেমেছে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা সড়ক অবরোধ করে কোটা সংস্কারের দাবি জানান। ধানমন্ডির মিরপুর রোড ও বাড্ডার প্রগতি সরণিতে অবস্থান করায় ওই দুই সড়কে দুপুরের পর থেকে তীব্র যানজট দেখা দেয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। সোমবার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদল বৈঠক করে আন্দোলন এক মাস স্থগিতের ঘোষণা দেয়। সচিবালয়ে এ ঘোষণা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে তোপের মুখে পড়েন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। আন্দোলনকারীরা এক মাস সময় দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সেখান থেকে চলে যান। আন্দোলনকারীরা নতুন আহ্বায়ক হিসেবে বিপাশা চৌধুরীর নাম ঘোষণা করেন। গতকাল সকাল ১১টা থেকে তারা আবার রাজু ভাস্কর্য এলাকায় অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এসময় মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের অংশও টিএসসি এলাকায় অবস্থান নেয়। দিনভর দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শেষে বিকালে যৌথভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই দুই পক্ষ একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে আসেন। বিকাল সাড়ে পাঁচটায় সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক হাসান আল মামুন তিন দফা দাবিতে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত অবরোধ চলবে। তাদের তিন দফা দাবি হলো, আটককৃতদের মুক্তি, অসুস্থদের চিকিৎসা এবং কোটা সংস্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা। এর পরে একসঙ্গে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিভিন্ন হল প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে এসে জড়ো হন। একপর্যায়ে মতিয়া চৌধুরীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয় সেখানে। এসময় কুশপুত্তলিকায় জুতা ছুড়তে দেখা যায় অনেককে। রাত আটটায় আন্দোলনকারীরা গতকালের মতো কর্মসূচি শেষ করার ঘোষণা দেন। উল্লেখ্য, সোমবার সংসদ অধিবেশনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন, ‘পরিষ্কার বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধ চলছে, চলবে। রাজাকারের বাচ্চাদের আমরা দেখে নেবো। তবে ছাত্রদের প্রতি আমাদের কোনো রাগ নেই। মতলববাজ, জামায়াত-শিবির, তাদের এজেন্টদের বিরুদ্ধে সামান্য শৈথিল্য দেখানো হবে না। অন্যদিক গতকাল সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আগামী বাজেটের পর কোটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। যদিও তিনি কোটা সংস্কারের পক্ষেই মত দেন।
কুশপুত্তলিকা দাহ: নতুন করে আন্দোলন জোরদার হওয়ার পেছনে ছিল কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সংসদে দেয়া বক্তব্য। এ কারণে আন্দোলনকারীদের ক্ষোভও ওই বক্তব্য ঘিরে। সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীদের মিছিলের সামনে ছিল মতিয়া চৌধুরীর কুশপুত্তলিকা। গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে ওই কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর সময় শিক্ষার্র্থীদের জুতাও ছুড়তে দেখা যায়।
কড়া নিরাপত্তা: এদিকে গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার সব পথেই ছিল পুলিশের কড়া প্রহরা। সকালবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢোকার সড়কগুলোতে কোনো সন্দেহভাজনদের দেখামাত্র তাদের দেহ তল্লাশি করে পুলিশ। এতে সেখানে জটলা বেঁধে যায়। অনেককে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয় সেখানে। তবে বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে তল্লাশি কার্যক্রম কমে আসে পুলিশের। ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল দেখা যায়নি খুব একটা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল প্রবেশের সড়ক শাহবাগ মোড়, দোয়েল চত্বর, বুয়েটের গেট, পলাশী, নীলক্ষেত মোড়ে পুলিশের সদস্যদের সতর্ক প্রহরায় থাকতে দেখা গেছে। প্রত্যেকটি মোড়ে ছিল পুলিশের দুটি করে ভ্যান। এছাড়া শাহবাগ মোড়ে পুলিশের একটি রায়টকার এবং একটি জলকামান প্রস্তুত ছিল। সেখানে ডিবি পুলিশের ৩টি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বিশেষ করে শাহবাগ মোড়ে ছিল পুলিশের বিশেষ নজরদারি। আন্দোলনকারীরা কোনোক্রমেই যাতে শাহবাগের মোড়ের সড়কে না আসতে পারে সেদিকে কঠোর নজরদারি ছিল তাদের।
রাস্তায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও: এবার সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। ঢাকাসহ বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে একই দাবিতে গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন তারা। ব্যানার ফেসটুন প্ল্যাকার্ড নিয়ে গতকাল সকাল ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে রাজধানীর বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল-স্লোগান নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে সংলগ্ন রাস্তায় নেমে আসে। রাস্তায় ও ফুটপাতে অবস্থান নেন। অবরোধ করেন সড়ক। চলতে থাকেন মিছিল, স্লোগান, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন। এতে বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকাল পর্যন্ত তারা রাস্তায় অবস্থান করলে দীর্ঘতর হয় যানজট। ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা।
রাজধানীর মিরপুর রোডের সোবহানবাগে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সকালে রাস্তায় নামেন। তারা সড়ক সড়কের এক পাশে অবস্থান নিয়ে মিছিল স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা ৩টার দিকে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল লতিফ মানবজমিনকে বলেন, ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। আর শঙ্কর বাসস্ট্যান্ডে ফুটপাতে অবস্থান নিয়েও শিক্ষার্থীরা মিছিল করছেন।
একই দাবিতে গতকাল মিরপুরের তালতলায় রাস্তায় নামেন গ্রিন ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থীরা। বিকাল পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান নেন। ধানমন্ডিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন প্রাইম এবং ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও।
থানার ডিউটি অফিসার (এসআই) মো. আকবর আলী জানান, ধানমন্ডিতে ইন্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও কোটা সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। একই দিন রাস্তায় নামে আইডিয়্যাল ইউনিভর্সিটির শিক্ষার্থীরাও।
এদিকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে অবস্থান নেয় নর্থসাউথ (এনএসইউ) ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) শিক্ষার্থীরা। তারাও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। রাস্তার একাংশ অবরোধ করে সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। বিকাল ৫টার দিকে তারা ওই দিনের অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে সরে যান।
ভাটারা থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) লাল মিয়া মানবজমিনকে বলেন, ছাত্রছাত্রীরা বসুন্ধরা গেটের কাছে অবস্থান নিয়ে দীর্ঘক্ষণ মিছিল-স্লোগান দিতে থাকে। এসময় যানজটে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। তবে বিকাল পাঁচটার দিকে তারা রাস্তা থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
অপর দিকে রামপুরা ব্রিজের পূর্বপাশে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে কোটা বিরোধী প্লাকার্ড হাতে প্রথমে মানববন্ধনে দাঁড়ান। এসময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর রামপুরা ব্রিজের কাছে রাস্তার দুই পাশে অবস্থান নেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। এতে বেশ কিছু সময় ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। অবশ্য তারা আগের দিনও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।
ইউআইটিএস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমেরিকান দূতাবাসের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। কুড়িল থেকে রামপুরা পর্যন্ত পুরো রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রামপুরা ও কুড়িল বিশ্ব রোডের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ সৃষ্টি করে কর্মসূচি পালন করেছেন আরো কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম সেমিস্টারের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী ফারদিন সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে আমরা তা বিবেচনায় নেবো। এখানে আমরা বিকাল পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাব। সিদ্ধান্ত এলে এর সময় আরও বাড়ানো হবে।
ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে বিক্ষোভ করে স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তবে তারা রাস্তা অবরোধ করেনি। স্টেট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা অবস্থান ধরে রাখবো। কোটা সংস্কার, অর্থমন্ত্রীর ভ্যাট আরোপের বক্তব্য প্রত্যাহার এবং মতিয়া চৌধুরীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, শিক্ষার্থীরা সড়কের এক পাশ বন্ধ করে বিক্ষোভ করেছে। ভাটার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কামরুজ্জামান বলেন, প্রথমে সড়কের একপাশ ও পরে দু’পাশ বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করেছে। এতে যানজটের তৈরি হয়।
ভিসি ভবনে হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনে সংঘটিত ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনা খতিয়ে দেখতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও দোষীদের চিহ্নিত করে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনস্থ কনফারেন্স রুমে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সিন্ডিকেট সদস্য ও আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নীলিমা আকতার, এসএম বাহালুল মজনুন ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোয়াজ্জম হোসেন মোল্লা।
আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য হলে প্রতিহত করা হবে: ছাত্রলীগ
কোটা সংস্কারের নামে আন্দোলনে নৈরাজ্য হলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীবান্ধব। তিনি বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীরা আন্দোলন করে যাচ্ছে। তারা ভিসি ভবনে হামলা করেছে। যারা হামলা করেছে তারা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী কি না আমাদের প্রশ্ন। আন্দোলনের নামে চক্রান্তকারীরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইলে তাদের প্রতিহত করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনসহ কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের হামলায় আহত আবু বকর সিদ্দিক নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর নিহতের গুজব ছড়ানোয় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইসিটি আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগ। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি করা হয়। ঢাবি ভিসির বাসভবনে ভাঙচুর, লুটপাট, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ অস্থিতিশীল করার প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, অনেকে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা ভিসির বাড়িতে হামলা করেছে, তাদের শাস্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকার এক মাস সময় নিয়েছে, যারা এখন আন্দোলন করছেন তারা পড়ার টেবিলে যান, ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, আগামী মে মাসে প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন। এরপরও যারা আন্দোলন করছেন, এরা বিশৃঙ্খলাকারী। এদের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের না যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সমাবেশে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।
কোটা সংস্কারের দাবি নৈতিক, পূর্ণ সমর্থন শিক্ষক সমিতির
কোটা সংস্কারের দাবিকে নৈতিক মন্তব্য করে এ দাবির প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। রোববার ভিসির বাস ভবনে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলনে পুলিশের বাড়াবাড়িকে সমর্থন করি না। আর আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার খরচ রাষ্ট্র অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বহন করার দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ৭ই মে’র মধ্যে কোটা সংস্কারের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এর সমাধানে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশ দিয়েছেন সেজন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। এবং এ সময়ের মধ্যেই এর সমাধান করা হবে বলে আশা করছি। এ সময় ভি?সির বাসভবনে হামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের শান্ত পরিস্থিতি অশান্ত করতে কিছু সুবিধাবাদী এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে পারে না। ২৫শে মার্চ কালরাত এবং ইতিপূর্বে যেসব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে সেই কায়দায় প্রশিক্ষিতদের দিয়ে এ হামলা চালানো হয়। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও তার পরিবারকে হত্যা করার জন্য পরিকল্পনা করেছিল। তাদের মধ্যে পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা আবারো জেগে উঠেছিল। মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক ড. এজেএম শফিউল আলম ভূঁইয়া, অধ্যাপক জিয়াউর রহমান, সহকারী অধ্যাপক নীলিমা আক্তার প্রমুখ।
টানা তিন দিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার কোনো বিভাগেরই ক্লাস হয়নি। এমনকি পূর্ব নির্ধারিত চূড়ান্ত পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দেয়ায় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে জাবি শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান ও চলমান আন্দোলন চালিয়ে নিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আর আগে সকাল ১১টায় বিক্ষোভ-পূর্ব সমাবেশে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, জাবি শাখার আহ্বায়ক খান মুনতাসীর আরমান বলেন, ‘মতিয়া চৌধুরী যদি ৩ দিনের মধ্যে তার প্রদত্ত বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন তবে তাকে জাবি ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বেড়ে উঠেছি। মতিয়া চৌধুরী আমাদের সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন আমাদের জন্য তা অত্যন্ত অপমানজনক। সমাবেশ শেষে শতাধিক শিক্ষার্থী একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এসে শেষ হয়। কোটা সংস্কারের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সোমবার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নূরুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক বশির আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নেতারা বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নিয়ে উল্টো তাদের ওপর পুলিশ যে নৃশংসভাবে হামলা চালিয়েছে তা সত্যিই দুঃখজনক। এ ঘটনায় জাবি শিক্ষক সমিতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন। এছাড়া শিক্ষক সমিতি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি সিনেট ভবনের সামনে পৌঁছালে আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে সেখানে পুলিশ এসে জড়ো হয়। দুপুর ২টায় পরিবহন মার্কেটের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে তারা দাবি করেন শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা কোটা সংস্কারের আন্দোলন করছে। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রেখে বেলা ১১টায় বিক্ষোভ সমাবেশ করবে তারা। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণে স্পষ্ট বক্তব্য না পাওয়া পর্যন্ত রাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সোমবার রাতে মৌলভীবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মশাল মিছিল শুরু করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এমএ সামাদের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ইহাম মুজাহিদ, সুবিনর রায় শুভ, পিনাক দেব, মিয়া মো. রিপন, শারফিন আহমদ সুমন, প্রশান্ত দেব ও সিরাজুল হাসান। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশের কঠোর অবস্থানের মধ্যে “কোটা বাতিল কর”, “মেধাবীদের মূল্যায়ন কর” স্লোগানে মুখরিত করে মৌলভীবাজারের রাজপথ। এসময় পুলিশের অবস্থান ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে বরগুনায় পৃথক দুটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ই এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় বরগুনা প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। এরপর সকাল ১১টায় বরগুনা প্রেস ক্লাবের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় আরো একটি মানববন্ধন। মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বরগুনার কৃতী সন্তান অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের বাসভবনে হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানান। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন বরগুনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সেক্টরস কমান্ডার ফোরাম একাত্তরের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন মনোয়ার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুর রশিদ, জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মনির হোসেন কামাল, বরগুনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি চিত্ত রঞ্জন শীল, জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি সোহেল হাফিজ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.