ডাকাতি আর ধর্ষণই ছিল যার নেশা

ডাকাত সর্দার মোস্তাক আহমদ (৪০), যাকে এক নামে মৌলভীবাজার জেলার সকলেই চেনে। রাজনগর উপজেলার মৌলভীরচক গ্রামে তার বাড়ি। ডাকাতিতে তার কুখ্যাতি থাকলেও নারীদের জন্য সে ছিল এক ভয়ঙ্কর দানব। ডাকাতির পাশাপাশি নারীদের ধর্ষণই ছিল তার নেশা। ডাকাতিকালে ধর্ষণ করা অনেকটা নেশায় পরিণত হয়েছিল। লোকলজ্জার ভয়ে ধর্ষণের শিকার নারী বা তাদের পরিবার কেউ কোনদিন অভিযোগ করেনি। আতঙ্কিত পরিবার অনেক সময় মামলাও করতো না। ১৪-১৫ বছর বয়সে ডাকাতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়া ডাকাত সর্দার মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে কামারচাক ইউনিয়নের চানখারহাবেলী গ্রামে ২০০৮ সালে ডাকাতির সময় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। ওই মামলা এখনো বিচারাধীন। এরপরও অবশ্য জেলার বেশ কয়েকটি থানায় ডাকাতির ছাড়াও তার বিরুদ্ধে পৃথক ধর্ষণ মামলা রয়েছে। ডাকাত সর্দার মোস্তাক আহমেদ বর্তমানে পুলিশের জালে বন্দি হয়ে হাজতবাস করছেন। কুলাউড়া থানা পুলিশ তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদকালে গত বুধবার এসব ভয়ংকর তথ্য দেয়। ডাকাতির নতুন নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নামতো ডাকাত সর্দার মোস্তাক। জেলার পুলিশ যখন তার বিরুদ্ধে মাঠে নামনো তখন সে চলে যেত ঢাকায়। নির্ধারিত সময়ে ডাকাত গ্যাংদের সংঘটিত করে রাখতো। ঢাকাতে নেমে কাজ সেরে ভোরেই চলে যেত ঢাকায়। তার কারণে অতিষ্ঠ রাজনগর থানার পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার গতিবিধি শনাক্ত করে। ২০১৫ সালে রাজনগর থানার তৎকালীন ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম ঢাকা থেকে আসার পথে বাসস্ট্যান্ডেই তাকে আটক করেন। এর পর সে বিভিন্ন মামলায় জেলে ছিল। জেল থেকে বের হয়ে সে আবারো নেমে পড়ে তার পেশায়। পরে ২০১৭ সালের ২৭শে নভেম্বর কমলগঞ্জ উপজেলার একটি বাড়িতে ডাকাতিকালে এলাকাবাসী মোস্তাককে আটক করে গণপিটুনি দেয়। পরে আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুস্থ হয়ে ওঠার পর আদালতের মাধ্যমে তাকে মৌলভীবাজারের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। পুলিশ জানায়, মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন থানায় ডাকাত সর্দার মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে ৬টি ডাকাতির ও একটি ধর্ষণ মামলা রয়েছে। ডাকাতি করতে গিয়ে মোস্তাক নারী ধর্ষণ করতো বলে লোকমুখে জানা যায়। কিন্তু ধর্ষণের বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ ছিল না।
কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের একটি ডাকাতির ঘটনায় করা মামলায় মোস্তাককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আদালতের কাছে রিমান্ড আবেদন করে। এ প্রেক্ষিতে আদালত গত ২ থেকে ৪ঠা এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে ৩রা এপ্রিল দিবাগত রাতে কুলাউড়া থানা পুলিশকে মোস্তাকের দেয়া তথ্যমতে তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি দেশীয় পাইপগান এবং দুটি গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল হক সেলিম জানান, মোস্তাক একজন ভয়ঙ্কর প্রকৃতির ডাকাত। ২০০৮ সালে চানখারবিল গ্রামের এক গৃহবধূকে ধর্ষণের দায়ে করা একটি মামলা বিচারাধীন আছে। তার কারণে এলাকার মানুষও অতিষ্ঠ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তাক ডাকাতিতে গিয়ে প্রায়ই নারীদের ধর্ষণ করতেন বলে স্বীকার করেছেন। আগে বিষয়টি জনশ্রুতি ছিল। অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের ঘটনায় রাজনগর থানায় মোস্তাকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.