রথীশ হত্যা: স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্নিগ্ধা যা বলেছে...

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্বামী রথীশ চন্দ্র ভৌমিককে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন স্নিগ্ধা ভৌমিক। পরকীয়া প্রেমিক কামরুলের সঙ্গে মিলে হত্যার নির্মম বর্ণনা দিয়েছেন ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে। স্নিগ্ধা বলেন, রথীশকে হত্যা করলে সবাই ভাববে জঙ্গিরাই তাকে মেরেছে- এ ভাবনা নিয়েই তাকে হত্যা করা হয়। এর কারণ হিসাবে জানায়, রথীশ ছিল জেএমবির হামলায় নিহত জাপানি নাগরিক ও মাজার খাদেম হত্যা মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী। আর এ কারণেই জঙ্গিরা তাকে হত্যা করেছে- এমনটা বিশ্বাসযোগ্য হবে। বৃহস্পতিবার রাতে রংপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফা ইয়াসমিন মুক্তার খাস কামরায় স্নিগ্ধা ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি দেন। সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে দেয়া জবানবন্দিতে স্নিগ্ধা জানায়, ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি।
ওদিকে স্নিগ্ধা ভৌমিকের পরকীয়া প্রেমিক কামরুল ইসলামের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফা ইয়াসমিন মুক্তা তার এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপরদিকে স্নিগ্ধা ভৌমিকের পাশাপাশি দুই স্কুলছাত্র সবুজ ইসলাম (১৭) ও রোকনুজ্জামানের (১৭) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। জবানবন্দি শেষে স্কুলের দুই ছাত্রকে গতকাল সকালে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। বিচারক আরিফা ইয়াসমিন মুক্তার কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সূত্র ধরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রংপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক আল আমীন সাংবাদিকদের বলেন, ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে দীপা তার স্বামীকে হত্যার দায় স্বীকার করেন এবং কামরুলের ইসলামের পরকীয়ার কথাও স্বীকার করেন। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, দুই কিশোর তাদের জবানবন্দিতে শিক্ষক কামরুলের নির্দেশে তার নির্মাণাধীন পরিত্যক্ত বাড়ির একটি কক্ষে গর্ত খোঁড়ার কথা স্বীকার করে। ওই গর্তেই রথীশের মাটিচাপা দেয়া লাশ পাওয়া গিয়েছিল। আলাদাভাবে জবানবন্দি নেয়ার পর স্নিগ্ধা ও দুই কিশোরকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন বিচারক মুক্তা। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, অ্যাডভোকেট রথীশ ভৌমিককে হত্যা করার পর লাশ ঘরের মেঝেতে রেখে তার স্ত্রী স্নিগ্ধা ও কামরুল শারীরিক মেলামেশা করে রাতভর। তাদের পরকীয়া প্রেমের কাহিনী জানতো অ্যাডভোকেট রথীশের ব্যক্তিগত সহকারী মিলন মোহন্ত। আর এ কারনে খুনের সঙ্গে জড়িত বাবু সোনার সহকারী মিলন মোহন্তকে এই মামলায় বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়। ওদিকে সূত্র জানায়, স্নিগ্ধা ও কামরুল গোপনে দেশ ছাড়তে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তারা পালাতে পারেননি।
উল্লেখ্য, আইনজীবী রথীশ ভৌমিক বাবু সোনা ৩০শে মার্চ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাসা থেকে নিখোঁজ হন। পাঁচ দিন তদন্ত শেষে র‌্যাব-পুলিশ তার রহস্য উদঘাটন করে। ২৯শে মার্চ রাত ১০টার দিকে নগরীর তাজহাট বাবুপাড়ার নিজ বাসাতেই ঘুমের বড়ি খাইয়ে অচেতন করে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় তাকে। ৪ঠা এপ্রিল দিনগত রাতে তার তাজহাট মোল্লাপাড়ার কামরুলের নির্মাণাধীন পরিত্যক্ত বাসা থেকে বাবু সোনার লাশ উদ্ধার করে র‌্যাব। বাবু সোনা জাপানি নাগরিক ও খাদেম হত্যা মামলার বিশেষ পিপি, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামী নেতা এটিএম আজাহারুল ইসলামের সাক্ষী ছিলেন। এছাড়া তিনি জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক, আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ট্র্যাস্টেও ট্র্যাস্টি, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। এদিকে অ্যাডভোকেট রথীশের হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিকের প্রেম কাহিনী মানুষের মুখে মুখে। রথীশ ও স্নিগ্ধার বিয়ে প্রায় ২ যুগ পার হলেও স্নিগ্ধার স্বামী অ্যাডভোকেট রথীশ এখনও বেশ সুদর্শন। পাশাপাশি কামরুল ইসলাম বিয়ের প্রায় দেড় যুগ হলেও তার ঘরে রয়েছে সুন্দরী স্ত্রী রোজ।

No comments

Powered by Blogger.