গুপ্তচর ইস্যুতে বাংলাদেশকে পাশে চায় পশ্চিমা দুনিয়া: পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে মার্কিন দূতের সাক্ষাৎ

সাবেক রুশ গুপ্তচর ও তার মেয়েকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মস্কোর বিরুদ্ধে  পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জুয়েল রিফম্যান গতকাল পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ সমর্থন কামনা করেন। এর আগে বৃটেনের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের সমর্থন চাওয়া হয়েছে। বৃটেনের অন্য মিত্ররাও নানাভাবে ঢাকার সমর্থন চেয়েছেন। ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংস্থা-ওপিসিডব্লিউতে রাশিয়ার অনুরোধে নেদারল্যান্ডে বুধবার এক বিশেষ অধিবেশন হয়েছে। দ্য হেগে নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহাম্মদ বেলালের সভাপতিত্বে ওই অধিবেশন চলাকালে মার্কিন দূত ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওপিসিডব্লিউ’র বর্তমান চেয়ারম্যান বাংলাদেশ।
বুধবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র সচিবের গুপ্তচর হত্যা চেষ্টা ইস্যুতে জরুরি বৈঠক করেন ঢাকাস্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জুয়েল রিফম্যান। তিনি এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ব্যাখ্যা এবং তাদের পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করেন। সচিবের সঙ্গে মার্কিন দূতের বৈঠকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের আসন্ন কক্সবাজার ও রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনের বিষয়ে আলোচনা হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আগ্রহী মিয়ানমারের মন্ত্রীর আগামী ১১ থেকে ১২ই এপ্রিলের সফর নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। বৈঠক শেষে ওপিসিডব্লিউ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জুয়েল রিফম্যান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। রাশিয়ার কার্যকলাপে উদ্বিগ্ন আমরা। দেশটি আন্তর্জাতিক সব আইন ভঙ্গ করেছে। আমাদের উদ্বেগের কথা এখানকার কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। আমরা এ নিয়ে আবারো কথা বলবো।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়াকে বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস প্রয়োগে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব ও রাশিয়ার মধ্যে রীতিমত প্রক্সি ওয়ার চলছে। সেখানে বাংলাদেশ কারও পক্ষ না নেয়ার নীতি নিয়েছেন। যদি এ ইস্যুতে জাতিসংঘ বা কোনো বৈশ্বিক ফোরামে ভোটাভুটি হয় তাতে বাংলাদেশের এবসটেইন বা ভোটদান থেকে বিরত থাকার নীতি নেবে বলে আভাস দেন সেগুনবাগিচার কূটনীতিকরা।
উল্লেখ্য, বৃটেনের স্যালিসবুরিতে গত ৪ঠা মার্চ স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়াকে বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস প্রয়োগে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় প্রায় ১৫০ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্তত ২৪টি দেশ। ঘটনাটি নিয়ে বিশ্বাঙ্গনে তোলপাড় চলছে। রাশিয়ার তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ‘তথাকথিত’ স্ক্রিপালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কূটনীতিকদের বহিষ্কারের নিন্দা করেছে ক্রেমলিন। গত সপ্তাহে ৬০ জন মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার এবং রাশিয়ায় মার্কিন কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
রুশগুপ্তচরকে কি ধরনের গ্যাস ব্যবহার করে হত্যার চেষ্টা হয়েছে তাই তদন্ত করছে বৈশ্বিক রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক সংস্থা ওপিসিডব্লিউ। ওই সংস্থার বর্তমান চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশের নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে।
রাশিয়ার চাওয়া: এ নিয়ে রাশিয়াও তাদের অবস্থান জানিয়ে বাংলাদেশের কাছে গত ২২শে মার্চ একটি কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়েছে। মস্কোর বক্তব্য হচ্ছে- এ ঘটনার সঙ্গে রাশিয়া কোনোভাবেই যুক্ত নয়। এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দুনিয়ার ‘অন্যায্য’ যে কোনো পদক্ষেপেই যেন ঢাকা সায় না দেয় সেটাই চাইছে মস্কো। উল্লেখ্য, এ অবস্থার মধ্যে মস্কো সফর করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে গত ২রা এপ্রিল মাহমুদ আলীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। সেখানে অন্যান্য ইস্যুর সঙ্গে এ বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে এ বিষয়ে কি আলোচনা হয়েছে তা জানানো হয়নি।
ওপিসিডব্লিউ’র অধিবেশনেও পাল্টাপাল্টি
এদিকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অনুষ্ঠিত ওপিসিডব্লিউ বিশেষ অধিবেশনে গুপ্তচর হত্যাচেষ্টার অভিযোগের যৌথ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। কিন্তু বৃটেন রাশিয়ার এ প্রস্তাবকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়েছে। রাশিয়ার অনুরোধে ডাকা জরুরি ওই বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বৃটিশ প্রতিনিধি দল এই মন্তব্য করেন। এর আগে গুপ্তচর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বৃটেনের কাছে থাকা তথ্য-প্রমাণ হস্তান্তরের আহ্বান জানায় রাশিয়া। এর জবাবে বৃটেন বলেছে, গুপ্তচরের ওপর হামলার ঘটনায় রাশিয়াই দায়ী। তবে রাশিয়া বৃটেনের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। মস্কোর প্রতিনিধিরা বলেছেন, গুপ্তচর হত্যার ঘটনায় রাশিয়ার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

No comments

Powered by Blogger.