চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে বছরে সর্বস্বান্ত ৬৪ লাখ মানুষ, বীমা পলিসি বাস্তবায়নের আহ্বান

জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৭টি উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা...
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে দেশের ৪০ ভাগ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা হলেও ৫০ ভাগ মানুষ এখনো ভালোমানের স্বাস্থ্যসেবা পায় না। অপরদিকে, দেশে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ব্যয় দিনকে দিন বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে  জানিয়েছে,  কেবলমাত্র  চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে বাংলাদেশে  প্রতিবছর ৩ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র হচ্ছে। ১৫ শতাংশ পরিবার অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ) বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এর  আগে,  গত ১৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘ট্র্যাকিং ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ :২০১৭ গ্লোবাল মনিটরিং প্রতিবেদনে’ বলা হয়েছে-জীবনযাত্রার মান নির্বিশেষে প্রত্যেকেই প্রয়োজন অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা পাবে। আর এ স্বাস্থ্যসেবা পেতে গিয়ে আর্থিক দীনতায় পড়তে হবে না কাউকেই। ইউএইচসির ঘোষণায় এমনটি বলা হলেও বাংলাদেশে অনেক মানুষকে আর্থিক বিপর্যয়ে পড়তে হচ্ছে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য ব্যয়ের কারণে।
সর্বশেষ ২০১৫ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্ট’ (এএনএইচএ) এর তথ্যে জানা যায়, স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে জনপ্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ৬৭ টাকাই রোগীর পকেট থেকে ব্যয় করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য সেবায় সরকার ব্যয় করছে জনপ্রতি ২৩ টাকা, দাতা সংস্থাগুলো ৭ টাকা ও অন্যান্য সংস্থা ৩ টাকা
এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ডক্তার ফায়েজুল হাকিম রেডিও তেহরানকে বলেন, দেশের নাগরিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সাথে চিকিতসা ব্যয় ও বেড়েছে। এখন সরকারী হাসপাতালেও রোগীদের নিজের পকেটের টাকা দিয়ে সেবা কিনতে হয়। এর ফলে দরিদ্র মানুষেরা আরো দরিদ্র হয়ে পড়ছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে; সরকারী হাসপাতালের ইউজার ফী বাতিল করতে হবে; বাজেট বাড়াতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুরের জেলা থেকে কোনো রোগী এসে সহজে ঢাকায় বিশেষাইত হাস্পাতালে চিকিত্সা নিতে পারেন না, কারণ আমাদের দেশে রেফারেল সিস্টেম ভালো নয়। অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কার্যকর না থাকা, চিকিত্সকদের ইচ্ছামাফিক ফি-নির্ধারণ, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধের দাম বৃদ্ধি, দালালদের অপতৎপরতা-এসব বিভিন্ন কারণে বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়। চিকিত্সা ব্যয় বাড়ায় অতিদরিদ্র মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর প্রায় ৬৪ লাখ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেছেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ধারণায় ২০৩০ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে ও সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুসারে নিজের পকেট থেকে চিকিৎসা ব্যয় ৩০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে পারলে তা সহনীয় পর্যায়ে আসবে। এর জন্য বীমা পলিসি সহায়তা করতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য এবং স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেছেন বলেন, দরিদ্ররা পয়সা দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা কিনতে গিয়ে গরিব হয়ে যাচ্ছে। তাই তাদের  স্বাস্থ্য সেবার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.