স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জাতীয় পুষ্টি পরিষদের খাদ্যনির্দেশনা

বাংলাদেশের অপুষ্টি একটি অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। দারিদ্র্য, অধিক জনসংখ্যা, খাদ্য নিরাপত্তার অভাব, রোগ নিয়ন্ত্রণের অপ্রতুলতা, পুষ্টি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব ইত্যাদি অপুষ্টি সমস্যার অন্যতম কারণ। অপুষ্টির প্রধান শিকার হচ্ছে মা ও শিশু।
আমাদের দেশের ৯৪ শতাংশ শিশু বিভিন্নমাত্রার অপুষ্টিতে ভুগছে। এ দেশে মায়েদের গড় ওজন ও উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। অল্প বয়সে ঘন ঘন সন্তান জন্মদান ও গর্ভকালীন অপুষ্টির ফলে বেশির ভাগ মা কম ওজনের শিশুর জন্ম দেন। আমাদের দেশে Vit-A আয়রন ও আয়োডিনের অভাবজনতি অপুষ্টি সমস্যাও খুবই প্রকট।Vit-A এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। এ ছাড়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। আয়রনের অভাবে এনিমিয়া দেখা দেয়। ফলে কর্মক্ষমতা ও শেখার ক্ষমতা কমে যায়। খাদ্যে প্রয়োজনীয় আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ড রোগ হয়। এতে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এ ছাড়া হাবাগোবা, বামনাকৃতি ও বিকলাঙ্গ শিশুরও জন্ম হয়। জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত সঠিকভাবে শুধু বুকের দুধ না খাওয়ানোর ফলে শিশুরা মারাত্মক অপুষ্টির শিকার হয়। বুকের দুধ শিশুর জন্ম সবচেয়ে উপকারী। শিশুর জন্য দরকারি সবধরনের পুষ্টি মায়ের দুধে বিদ্যমান। নইলে শিশুর সঠিক মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধি হয় না। আমাদের দেশের জনগণের বেশির ভাগ শুধু ভাতের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় খাবার মোটেও সুষম হয় না। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ এ দেশের জনগণের পুষ্টি, সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবনযাত্রার জন্য খাদ্য নির্দেশনা তৈরি করেছে। খাদ্য নির্দেশনার লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো:
- জনগণকে অপুষ্টি থেকে রক্ষা করা
- জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা
- সর্বস্তরের জনগণকে পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা
- খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা
নির্দেশনাগুলো-
প্রতিদিন বিভিন্ন রকমের খাবার খান :
- আপনার এলাকায় যেসব খাবার পাওয়া যায় সেসব খাবার প্রতিদিন খান।
- গর্ভবতী ও প্রসূতি মাকে বেশি করে খাবার দিন।
- বাড়ন্ত শিশুদের বেশি পরিমাণে বিভিন্ন রকমের খাবার দিন।
- বয়স্কদের শরীর উপযোগী খাবার দিন।
শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো ও উপযুক্ত বাড়তি খাবার দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করুন:
- বুকের দুধ খাওয়ানোর উপকারিতা ও গুরুত্ব সম্পর্কে উৎসাহিত করুন।
- জন্মের পর প্রথম ছয় মাস শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়ান।
- শিশুর ছয় মাস বয়স হলে ঘরে তৈরি বাড়তি খাবার খাওয়াতে শুরু করুন।
শরীরের সঠিক ওজন রক্ষার উপযোগী খাদ্যগ্রহণ নিশ্চিত করুন :
- নিয়মিতভাবে (সম্ভব হলে মাসে একবার) পরিবারের সবার ওজন দিন।
- জীবাণুমুক্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও টাটকা খাবার খান।
- কাঁচা-পাকা ফল ও শাকসবজি খাওয়ার আগে ধুয়ে নিন।
- খাবার নিরাপদভাবে তৈরি, পরিবেশন ও সংরক্ষণের অভ্যাস করুন।
- পচাবাসি ও খোলা খাবার খাবেন না। পরিমাণমতো তেল ও চর্বি খান।
- বাড়ন্ত শিশুদের একটু বেশি করে তেল ও চর্বি খাওয়ান।
- শাকসবজি ও রান্নায় তেল ব্যবহার করুন। রান্নায় উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার প্রাধান্য দিন।
প্রতিদিন বেশি পরিমাণে শাকসবজি ও ফল খান
- প্রতিদিন গাঢ় সবুজ ও রঙিন ফল খান।
- প্রতিদিন তাজা ফল খান।
আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করুন
- রান্নায় ও খাবার তৈরিতে পরিমাণমতো আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করুন।
- লবণ ও লবণ জাতীয় খাবার বেশি খাবেন না।
- প্রতিদিন ৫-১০ গ্রামের বেশি লবণ খাবে না।
নিরাপদ পানি পান করুন
- প্রতিদিন বেশি পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করুন।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলুন
- পরিবারের সবাই একসাথে বসে খাবার খান।
- মাত্রাতিরিক্ত খাবার ও পানীয় বর্জন করুন।
- ধূমপান ত্যাগ করুন ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন।
- প্রতিদিন নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করুন।
- প্রতিদিন হাঁটুন।
লেখিকা : সহকারী অধ্যাপিকা, জেড এইচ শিকদার ওমেন্স মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা
ফোন : ০১৭০৬৯১৪২৯৯

No comments

Powered by Blogger.