ইউএস বাংলার বিমানে ত্রুটি ছিল না

নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ দেশে আসছে আজ। বিকাল চারটায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমান লাশ নিয়ে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে (বিএএফ ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু) অবতরণ করবে। গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর এ তথ্য জানিয়েছে। নেপালের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে চিহ্নিত হওয়া ২৩ বাংলাদেশির লাশ দেশে আনা হচ্ছে। আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে দুর্ঘটনায় আহত শাহীন বেপারিকে গতকাল নেপাল থেকে দেশে আনা হয়েছে। তাকেও ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তার শরীরে ১৬ শতাংশ পোড়া ক্ষত রয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এ পর্যন্ত আহত ছয়জন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। আহত আরো একজনকে আজ ঢাকা আনা হবে। এদিকে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটি গঠিত তদন্ত দলের প্রধান জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত অনুসন্ধানে ইউএস বাংলা  বিমানের কোনো ত্রুটি তারা খুঁজে পাননি। তদন্ত কমিটির প্রধান ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে নেপালে গত শনিবার সন্ধ্যার পর দ্বিতীয় দফায় শনাক্ত হলো সানজিদা হক, ফয়সাল আহমেদ ও মো. নূরউজ জামান এর লাশ। গতকাল রোববার শনাক্ত হয়েছে উম্মে সামলা, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, আঁখি মনি, ফারুক হাসান প্রিয়কসহ আরো ৬ জনের লাশ। এ নিয়ে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ২৩ জনের লাশ শনাক্ত হলো। পিয়াস রায়সহ বাকি ৩ জনের লাশ শনাক্তে ডিএনএ টেস্ট করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
বিমানে ত্রুটি ছিল না: গতকাল রোববার সকালে সিভিল এভিয়েশন অফিসের সামনে প্রতিষ্ঠানটির গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ বলেন নেপাল গিয়ে বিমান দুর্ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। এ সময় তিনি বলেন, ইউএস বাংলা অত্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখে। তাদের পাইলট, এয়ারক্রাফটসহ সব কাগজপত্র ভেরিফাই করে দেখেছি, সব ঠিক আছে।
তিনি আরো বলেন, ব্ল্যাক বক্স বা ফ্লাইট রেকর্ডার আমরা সংগ্রহ করেছি। এ ছাড়া ককপিট সংগ্রহ করে রেখেছি। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) এবং পাইলটের কথাবার্তা আপনারা শুনেছেন। ককপিটে পাইলটদের কথাবার্তাও আছে। আমরা সেগুলোও বিশ্লেষণ করে দেখবো। প্লেনের গতি কোন দিক থেকে কোন দিকে গেছে, কেন গেছে, তার সঙ্গে কি কথাবার্তা হয়েছে সেসবও বিশ্লেষণ করবো। কোনো রকম গোলমাল দেখেছিল কি না বা টের পেয়েছিল কি না- এগুলো সব আমরা একেবারে যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করবো।
কানাডায় ব্ল্যাক বক্স পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা নিজেরা যাবো ব্ল্যাক বক্সের সঙ্গে। আমাদের মেইন থিম হচ্ছে, আমরা ঘটনাটা বিশ্বকে জানাবো যেন ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা আর না হয়। এখন ব্ল্যাক বক্সটি নেপালে লক করা আছে। ওটা নিরাপদ আছে। ওটাতে কেউ হাত দেবে না।
তিনি বলেন, কাঠমান্ডুর বিমানবন্দরটি অত্যন্ত জটিল। কিন্তু পাইলটের জন্য আসলে এটা জটিল না। পাইলটরা যথেষ্ট দক্ষতা রাখে। এরপরই তাদের পাঠানো হয়। আমরা চেক করি। প্রতিটি পাইলট ৬ মাস অন্তর অন্তর সিমুলেটরসহ পরীক্ষা দেন। তার আগে তাদের দীর্ঘ পড়াশোনা শেষ করতে হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের জ্ঞান অর্জন করতে হয়। আর ইউএস-বাংলার ফ্লাইট এবং তার কাগজপত্র আমি নিজে ভেরিফাই করে দেখেছি, সব ঠিক আছে। তারা বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনায় অত্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখে।
গতকাল নেপালের ১৪ ও চীনের এক নাগরিকের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে নেপাল কর্তৃপক্ষ। এরপর গতকাল সন্ধ্যার আগেই চিহ্নিত হওয়া বাংলাদেশি যাত্রীদের লাশের গোসল দেয়া হয়। আজ সকাল আটটার দিকে লাশগুলো নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসে নেয়া হবে। সেখানে জানাজা শেষে দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরপর বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে করে লাশ দেশে নিয়ে আসা হবে। তার আগেই ইউএস বাংলার একটি বিমানে সেখানে থাকা স্বজনরা দেশে আসবেন। দেশে আনার পর লাশ নেয়া হবে আর্মি স্টেডিয়ামে। সেখানে নামাজে জানাজা শেষে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
আহতদের অবস্থা স্থিতিশীল: ওদিকে বিমান দুর্ঘটনায় আহত শাহীন বেপারিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এই নিয়ে ওই ঘটনায় বাংলাদেশি আহত ছয়জনকে দেশে এনে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হল। এই পর্যন্ত যাদের আনা হয়েছে তাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, নেপালের কাঠমান্ডুতে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতরা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। বাংলাদেশে ফেরত আসা সব রোগী ভালো আছেন। নেপালের কাঠমান্ডুতে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা পরবর্তী সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনায় আহত কয়েকজনকে দেশে আনা হয়েছে। ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে একটি মেডিকেল টিম তাদের চিকিৎসা করছেন। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় চিকিৎসাধীন রোগীদের পাশে ভিড় না করতে স্বজনসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা কেউ হাসপাতালে রোগীদের আশেপাশে ভিড় করবেন না। উনারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। উনাদের অগ্রগতি সম্পর্কে আমরা টাইম টু টাইম ব্রিফ করবো। তিনি বলেন, এ দুর্ঘটনার পর পরই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মেডিকেল টিম গঠন করে আমরা নেপালে পাঠিয়েছি। তারা সেখানে কাজ করছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন প্রমুখ। ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, নেপাল থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসা সব রোগী ভালো আছেন। তাদের অবস্থা এখন স্থিতিশীল আছে। এখন আহতদের যে অবস্থা মেডিকেলের ভাষায় তাকে স্টেবল বলে। আমরা কাউকে শঙ্কামুক্ত বলতে পারছি না। একজন রোগী যতক্ষণ পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে না যান, ততক্ষণ পর্যন্ত শঙ্কামুক্ত বলা যায় না। সবাই স্থিতিশীল আছেন, ভালো আছেন। তিনি বলেন, বিমান দুর্ঘটনায় আহত যে পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে তাদের মধ্যে শাহরিনের অপারেশন করতে হবে। তার মানসিক অবস্থা আরেকটু স্থিতিশীল হলে অপারেশন করবো। এ ছাড়া মেহেদী হাসান ও তার স্ত্রী কামরুন নাহার স্বর্ণা, আলমুন নাহার অ্যানিসহ সবাই ভালো আছেন। তবে সবার মধ্যে দুশ্চিন্তা ভর করেছে।

No comments

Powered by Blogger.