সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর ছেড়ে যাচ্ছে হাজারো অধিবাসী

সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত দুই শহর ইস্টার্ন ঘৌটা ও আফরিন ছেড়ে যাচ্ছে হাজার হাজার অধিবাসী। প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে তারা। মানবাধিকারকর্মীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আফরিন ও ইস্টার্ন ঘৌটা ত্যাগ করেছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। উল্লেখ্য, ইস্টার্ন ঘৌটায় অব্যাহতভাবে বিমান হামলা চালাচ্ছে সিরিয়া সরকার ও এর মিত্র বাহিনী। আর সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে আফরিন শহরে হামলা চালাচ্ছে তুরস্ক। হামলার কারণে আফরিনের ৩০ হাজার অধিবাসী নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। আর সরকারি বাহিনীর হামলা থেকে আত্মরক্ষার্থে ইস্টার্ন ঘৌটা ছেড়েছে ২০ হাজার মানুষ। দীর্ঘ সাত বছর ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। এতে এখন পর্যন্ত মোট ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ৬১ লাখ মানুষ দেশের অভ্যন্তরেই তুলনামূলক নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। আর ৫৬ লাখ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সিরিয়ায় চার লাখেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
তুরস্ক সীমান্তের পরিস্থিতি
তুরস্ক সীমান্তবর্তী সিরিয়ার আফরিন শহরে প্রধানত কুর্দিদের বসবাস। সম্প্রতি সেখানে অভিযান পরিচালনা করছে তুরস্ক ও এর মিত্রবাহিনী। আকাশ ও স্থলপথে শহরটিতে হামলা চালাচ্ছে তারা। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এর তথ্য অনুযায়ী, আফরিন ও এর পার্শ¦বর্তী গ্রামগুলো থেকে প্রায় ৩০ হাজার অধিবাসী ঘরবাড়ি ত্যাগ করে সরকার নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। অব্যাহত বোমা বর্ষণের কারণে শহরটির শত শত পরিবার রাতের আঁধারে শহর ত্যাগ করছে। তুর্কি বাহিনীর বোমার আঘাতে এখন পর্যন্ত আফরিনের ১৮ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
মূলত কুর্দিদের সংগঠন কুর্দিশ পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটকে (ওয়াইপিজি) টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে তুরস্ক। দেশটি মনে করে, তুরস্কে অবস্থানরত কুর্দিদের সঙ্গে আফরিনের কুর্দিদের সংযোগ রয়েছে। এরা সরকার-বিরোধী আন্দোলনে তুরস্কের কুর্দিদের সহায়তা করে। সম্প্রতি রাজধানী আঙ্কারায় এক সমাবেশে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগান বলেন, আফরিন দখল না করা পর্যন্ত তুরস্ক অভিযান অব্যাহত রাখবে। ইতিমধ্যেই আফরিনের ৭০ শতাংশ নিজেদের দখলে নিয়েছে তুর্কি বাহিনী।
কী ঘটছে দামেস্কের উপকণ্ঠে
পর্যবেক্ষক সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ইস্টার্ন ঘৌটার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলো থেকে প্রায় ২০ হাজার মানুষ নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিমান হামলা চালাচ্ছে সরকারি বাহিনী। সরকারি বাহিনীর দাবি, তারা ইস্টার্ন ঘৌটার ৭০ শতাংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তারা স্বল্প পরিসরে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইস্টার্ন ঘৌটায় ত্রাণ পৌঁছানোর অনুমতি দিয়েছে। ত্রাণবাহী ২৫টি গাড়ি সেখানকার ডৌমা শহরে প্রবেশ করেছে। তবে, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস বলেছে, প্রয়োজনের তুলনায় এই ত্রাণ খুবই সামান্য। রেড ক্রসের সভাপতি পিটার মাউরের ইস্টার্ন ঘৌটা পরিদর্শনের পর বলেন, হামলায় মানুষ ক্লান্ত। তাদের খাদ্য ও চিকিৎসা প্রয়োজন। তার ভাষায়, ইস্টার্ন ঘৌটার রাস্তার কাছে এক বালক এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলো আমার কাছে পানি আছে কী না। এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায় যে, সেখানকার অবস্থা কতটা শোচনীয়।
কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ বেশ জটিল। তুরস্ক যখন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরোধিতা করছে, সেখানে ইরান ও রাশিয়া আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র। এর পরেও সিরিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তুরস্ক, রাশিযা ও ইরান নিজেদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় পাঠিয়েছে। তারা আগামী মাসে ইস্তাম্বুলে তিন দেশের অংশগ্রহণে একটি সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে পরামর্শ করবেন। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ কাজাখস্তানের আলোচনাকে সিরিয়ায় শান্তি ফিরিয়ে আনার একটি বড় সুযোগ বলে অভিহিত করেছেন। তিন বলেছেন, সিরিয়ার লাখ লাখ অধিবাসী আস্তানার দিকে তাকিয়ে আছে। আর তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভোসোগ্লু ইস্টার্ন ঘৌটায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.