ভাইস চেয়ারম্যানদের কষ্টকথা by মিলাদ জয়নুল

এবার নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন প্রত্যেক উপজেলার ভোটাররা। নির্বাচনের সময় ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা বেশ ঢাকঢোল বাজিয়ে প্রচারণা চালান। কিন্তু নির্বাচনের পর নিজের দায়িত্বের সীমাবদ্ধতায় অনেকটা লজ্জিত হন নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যানরা, এভাবেই নিজেদের কষ্টকথা জানালেন বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের দুই ভাইস চেয়ারম্যান।
এখানকার উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান রুকসানা বেগম লিমা এবং অপর ভাইস চেয়ারম্যান মুফতি শিব্বির আহমদ রেকর্ডসংখ্যক ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। এরপর তাঁদের শপথ গ্রহণ শেষে দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও প্যানেল চেয়ারম্যান পদ নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি প্রশাসন। উপায় না দেখে নিজ উদ্যোগে প্যানেল চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে আসেন রুকসানা বেগম লিমা।
সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়ে দেশের সেরা চেয়ারম্যান মনোনীত হন আতাউর রহমান খান। তিনি অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশ সফরে যাওয়ার সময় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাননি। বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুফতি শিব্বির আহমদ বলেন, দৃশ্যত: ভাইস চেয়ারম্যানদের কোনো কাজ নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাজ ভাগ-বাটোয়ারা করে দেয়া হলেও মাঠপর্যায়ে তা আটকে যায়। তিনি বলেন, ভাইস চেয়ারম্যানদের আইনগত কাজ নিয়ে তিনি অসনু্তষ্ট। এটা সারা দেশের চিত্র। মুফতি শিব্বির জানান, সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য বিভাগ থেকে উপজেলায় ১০টি গভীর নলকূপ প্রদান করা হয়েছে। বিধি মোতাবেক দুই ভাইস চেয়ারম্যানের ৫টি গভীর নলকূপ পাওয়ার কথা। কিন্তু তাদেরকে ১টি করে মাত্র ২টি টিউবওয়েল দেয়া হয়েছে। মুফতি শিব্বির বলেন, বিভিন্ন উপ-বিভাগ তদারকির দায়িত্বে থাকলেও তাদের সুপারিশ কেউ আমলে নেয় না। তাই এখন আর তারা কোনো সুপারিশ করেন না।
ভাইস চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত প্রতিনিধি হলেও আর্থিক ও প্রশাসনিক কোনো ক্ষমতা তাদের হাতে নেই। তাদের চেয়ার আছে-ক্ষমতা নেই। বিচার, সালিশ আর সামাজিকতা রক্ষা ছাড়া মাসের বেশির ভাগ সময়ই কাটে অবসরে। কাজ না থাকায় কেউ কেউ মাসে ৪-৫ দিন উপজেলা পরিষদে উপস্থিত থেকে দাপ্তরিক কাজ সারেন। উপজেলার অধিকাংশ কাজে ভাইস চেয়ারম্যানদেও তেমন কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আইনের ফাঁক-ফোকরে এখনো অনেকটাই অসহায় ভাইস চেয়ারম্যানরা।
আইন অনুযায়ী সরকারি মোট ১৭টি বিভাগ ন্যস্ত হয়েছে উপজেলা পরিষদের হাতে। কিন্তু বিভাগগুলোর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে যে ১১০টি কমিটি আছে, উপজেলায় এর ৮৫টির সভাপতি ইউএনও। উপজেলার দুস্থদের ত্রাণের জন্য করা ভিজিডি কমিটি, কৃষি পুনর্বাসন কমিটির সভাপতি ইউএনওরা। স্কুলের বিদ্যোৎসাহী নিয়োগের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে। ভিজিডি কমিটিতে ইউএনও’র মনোনীত দু’জন প্রতিনিধি থাকলেও এখানে মূলত সংসদ সদস্যদের কাছের লোকই নিয়োগ পান। উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত দুই ভাইস চেয়ারম্যানের নির্দিষ্ট কোনো কাজ নেই। নেই কোনো কাগজপত্রে স্বাক্ষরের ক্ষমতা। তাই ১৭টি বিভাগের স্থায়ী কমিটির দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও ভাইস চেয়ারম্যানদেও তোয়াক্কা করছেন না সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরাও গুরুত্ব দিচ্ছেন না উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের। এ কারণে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের মাঝে ক্ষোভ-অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান রুকসানা বেগম লিমা জানান, যে আশায় এই পদে আসীন হয়েছি, তার সিকিভাগও পূরণ হয়নি। আমাদের চেয়ে ইউপি চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা বেশি। আমাদের অফিসে যেসব পত্রিকা পড়ি, চা-বিস্কুট খাই, এগুলোর বিলও আমাদের দিতে হয়। নিজের টাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাই। আমরা সভা ডাকলেও কেউ তাতে তেমন গুরুত্ব দেয় না। আমাদের চেয়ারগুলোও অনেক সময় দখল হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.