এ কি রাজশ্রী প্রডাকশনের ছবি!

রাজশ্রী প্রডাকশনের কিছু কি দেখছি? যদি তাই হয়, যদি এই ম্যাচ তারই একটি ছবি হয় তাহলে আমরা তারই একটি ছবি দেখছি। একদিকে শ্রীলঙ্কার স্টেডিয়ামে দর্শকদের চোখে কান্না। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। দম বন্ধ করে বসে ছিলেন শ্রীলঙ্কার হাজার হাজার দর্শক। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন এই শ্রীলঙ্কাকে নাস্তানাবুদ করার পথে বাংলাদেশ। একে সিনেমা ছাড়া আর কি বলা যায়! গত রাতে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে নিদাহাস ত্রিদেশীয় ক্রিকেটের ফাইনালে বাংলাদেশ গর্বের সঙ্গে নিজেদের নাম লেখানোর পর এমনই মন্তব্য করা হচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় এ নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। ক্রিকইনফোর শিরোনাম ‘আগলি সিনস মার বাংলাদেশজ ড্রামাটিক উইন’। এতে ম্যাচের শেষ ওভারে সৃষ্ট উত্তেজনার দিকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। ওই সময় মাঠে ‘আগলি সিন’ সৃষ্টি হয়। শ্রীলঙ্কান একজন খেলোয়াড় বাংলাদেশী একজন খেলেয়াড়কে ধাক্কা দেন। পর পর কমপক্ষে দুটি নো-বল করা হয়। এসব নিয়ে আম্পায়ারের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানাতে থাকেন ম্যাচের নায়ক মাহমুদুল্লাহ। টিভির পর্দায় তখন দেখা যায়, তাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না আম্পায়ার। মাহমুদুল্লাহ নাছোড়বান্দা। তিনি কিছুতেই আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে খুশি নন। টিভির ক্যামেরা ঘুরে যায় মাঠের বাউন্ডারি লাইনের বাইরে। সেখানে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক শাকিব আল হাসানকে দেখা যায় উত্তেজিত ভঙ্গিতে। তিনি মাহমুদুল্লাহকে মাঠ থেকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করেন। দু’হাত দিয়ে তাদেরকে মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার আহ্বান জানাতে থাকেন। কিন্তু একজন আম্পায়ার তাকে তার জন্য নির্ধারিত স্বস্থানে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিতে থাকেন। এ সময় অভিযোগ করেন শাকিব। তিনি ওই আম্পায়ারকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই শাকিবের কথা মানবেন না। শাকিব আবারো মাহমুদুল্লাহকে মাঠ থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য বেরিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাতে থাকেন। এ সময় বাউন্ডারি লাইনের বাইরে দেখা যায় পুরো বাংলাদেশ টিম প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তীব্র এক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। অবশেষে খেলা শুরু হয়। আর সেই খেলায় ক্রিজে অন্যপ্রান্তে ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান রুবেল হোসেনকে নিয়ে প্রস্তুতি নেন মাহমুদুল্লাহ। জিততে বাংলাদেশের তখন প্রয়োজন শেষ দুই বলে ৬ রান। এক বল বাকি থাকতেই মাহমুদুল্লাহ বল পাঠিয়ে দেন ওই বাউন্ডারির ওপর দিয়ে বাইরে। তখন বাংলাদেশে যেন ‘আনন্দের পারমাণবিক বোমা’ ফেটে ওঠে। উত্তাল সাগরের ঢেউ কুল স্পর্শ করতে সময় নেয়। কিন্তু এই বিজয়ের আনন্দ বাংলার প্রতিটি প্রান্তে, অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়তে কোনো তিলিক পর্যন্তও সময় নেয় না। পুরো বাংলাদেশ যেন হয়ে পড়ে স্টেডিয়ামের গ্যালারি। আনন্দে ফেটে পড়েন পাড়া, মহল্লার প্রতিটি মানুষ। আনন্দ চিৎকারে রাতের বাংলাদেশ বিশ্বকে জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারে।

No comments

Powered by Blogger.