মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ: সুচির বিচার চেয়ে অস্ট্রেলিয়ার আইনজীবীদের আবেদন

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির বিচার দাবি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার একদল আইনজীবী। তার বিচার দাবিতে শুক্রবার ‘প্রাইভেট প্রসিকিউশন এপ্লিকেশন’ দাখিল করেছেন তারা। এতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের জন্য সরাসরি তাকে দায়ী করে তার জবাবদিহিতা বা বিচার দাবি করা হয়েছে। অনলাইন দ্য গার্ডিয়ানকে উদ্ধৃত করে এ খবর প্রকাশ করেছে হাফিংটন পোস্ট। এতে বলা হয়েছে, মেলবোর্নে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ আবেদন জমা দিয়েছেন ওই আইনজীবীরা। ওই মামলায় বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা অতিমাত্রায় ও পর্যায়ক্রমিক অপরাধ চালিয়েছে। কিন্তু দায়িত্বশীলের পদে এবং ক্ষমতায় থেকে তা ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছেন সুচি। এর মধ্য দিয়ে তিনি মিয়ানমারের নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের নৃশংসতা চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। ফলে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা রোহিঙ্গাদেরকে তাদের বাড়িঘর থেকে উৎখাত ও দেশান্তরী হতে বাধ্য করেছে।
এই আবেদনকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে, অর্থাৎ সুচির বিচার দাবির প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে হলে অস্ট্রেলিয়ার এটর্নি জেনারেল ক্রিশ্চিয়ান পর্টারের সম্মতি প্রয়োজন হবে। গার্ডিয়ান লিখেছে, এতে ক্রিশ্চিয়ান পর্টার সম্মতি না দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ সপ্তাহান্তে আসিয়ানের বিশেষ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে যাওয়ার কথা রয়েছে সুচির। তাকে এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার।
মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক গণ-আদালত: সুচি ও সেনাপ্রধানের বিচার শুরু
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি ও দেশটির সেনাপ্রধানসহ অন্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি আন্তর্জাতিক গণআদালতে বিচার শুরু হয়েছে।
শুক্রবার এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সুচিই প্রথম কোনো নোবেল জয়ী যিনি ব্যতিক্রমী এ আদালতে বিচারের সম্মুখীন হলেন এবং সম্ভবত দণ্ডিত হতে যাচ্ছেন।
সোমবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) নামে ওই আদালতে শুনানি শুরু হয়। কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে অনুষ্ঠিত এ শুনানিতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল অংশ নেয়।
এতে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ মাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড স্ট্যাডিজ অ্যান্ড প্রিভেনশনের গবেষক অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যানটন জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, পুলিশ, অন্যান্য বৌদ্ধ মিলিশিয়া এবং দেশটির বর্তমান বেসামরিক সরকার অভিযুক্ত।
রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তিনি বলেন, তারা মিয়ানমারের সর্বস্তরে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার। ওই শুনানিতে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকও অংশ নেন।
আজ ট্রাইব্যুনালে মিয়ানমারে মুসলিম নিপীড়ন বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হবে। বিকালে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সমাপনী বক্তব্য শেষে বিবাদী পক্ষ বক্তব্য রাখবেন।
বৃহস্পতিবার দিনভর বিচারকমণ্ডলীর সদস্যরা তাদের বক্তব্য পেশ করবেন। আট সদস্যের বিচারক প্যানেলে রয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্তে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও আইনজীবীরা।
পিপিটি মালয়েশীয় শাখার সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি চন্দ্র মোজাফফর বলেছেন, পাঁচ দিনের অধিবেশনে বিচারকরা প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক, বিশেষজ্ঞ সাক্ষীদের মতামত, ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি বিচার বিশ্লেষণ করবেন। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় রায় ঘোষণা হবে। বিচারকদের এ রায় জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও গোষ্ঠীর কাছে পাঠানো হবে।
এই ট্রাইব্যুনালে রোহিঙ্গা ও কাচিন সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত রাষ্ট্রীয় অপরাধের বর্ণনা দিয়েছেন। ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.