টাডমাডো শিখবে ইংরেজি, অংশ নেবে শান্তির সামরিক মহড়ায়: সিডনিতে সুচি-ম্যালকম বিরোধী বিক্ষোভের প্রস্তুতি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি এবং অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল উভয়ে এ সপ্তাহে তোপের মুখে পড়তে পারেন। সিডনিতে ১৭-১৮ই   মার্চ অনুষ্ঠেয় আসিয়ান-অস্ট্রেলিয়া শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে তারা রোহিঙ্গা বিষয়ে কথা বলবেন। অস্ট্রেলীয় পশ্চিমা মিত্ররা যখন বর্মী মিলিটারিকে একঘরে করছেন, তখন তারা সূচির জন্য সিডনিতে লাল গালিচা বেছানোর কাজ করছেন। গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত টাডমাডোকে ইংরেজি শেখাতে নতুন করে ১ লাখ ২৬ হাজার ডলার দিচ্ছে।
তবে শীর্ষ সম্মেলনে কথা যাই হোক বা না হোক, তিনি যে সিডনিতে বিক্ষোভের কবলে পড়বেন, তাতে সন্দেহ নেই। বিএনপির অস্ট্রেলীয় শাখা এবং সিডনিভিত্তিক রোহিঙ্গা গ্রুপ ওই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে অস্ট্রেলিয়ার মুখ্য মিত্ররা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একাট্টা হলেও অস্ট্রেলিয়া এই ইস্যুতে তার পশ্চিমা মিত্রদের পথ অনুসরণ থেকে বিরত আছেন। কারণ তারা মিয়ানমারের নিন্দা জানালে, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদেরকে তাদের আশ্রয় দিতে হবে।
ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম এবং মিয়ানমারের শীর্ষ নেতারা ওই বৈঠকে যোগ দেবেন এবং তখন তারা তাদের স্বদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে পারেন। 
১৯৭৭ সাল থেকে আসিয়ান-অস্ট্রেলিয়া সামিট হলেও এই প্রথম এই ফোরাম অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বসছে। যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে, তার মধ্যে রয়েছে ওই দেশগুলোর বিশেষ করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এমনকি সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করতে গিয়ে কি করে তারা মানবাধিকার লংঘন করছে সেসব বিষয়। গতকাল পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় সৈয়দ আতিকুল হাসন সিডনি থেকে জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছানোর পরে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি বিরাট বিক্ষোভের মুখে পড়বেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো বড়রকমের বিক্ষোভ দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মুসলিম জাতিগত সংখ্যালঘুদের নির্যাতন শুরু করার পরে বিদেশে এটাই হবে অং সান সুচির প্রথম সফর।
পাকিস্তান অবজারভার লিখেছে, এটা উল্লেখ করা দরকার যে মিয়ানমারের নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে আইডিপি হিসেবে গোড়াতে গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ার কারণে বাড়ি ছেড়ে পলায়নপর রোহিঙ্গারা আটকে পড়েছিল। সে কারণে তাদের চরম মূল্য দিতে হয়েছিল। অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি তারা রোহিঙ্গাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বিএনপির নেতাকর্মীরা এই বিষয়ে সমর্থন দিচ্ছেন।
বিএনপির সিডনি শাখা বলেছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছে, এবং অং সান সুচি যেভাবে তা সমর্থন করেছেন, তাতে  সভ্য বিশ্বেও প্রতিনিধি হয়ে তাকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা জানানো উচিত নয়। ‘কারণ তিনি লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনযজ্ঞে নেতৃত্ব দিয়েছেন,’ এই মন্তব্য করেছেন মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ শামীম। তিনি বিএনপি নেতা ও  স্থানীয় কমিউনিটি লিডার।
এদিকে সিডনিতে অবস্থানরত কম্বোডিয়ার প্রবাসী সম্প্রদায় কম্বোডীয় প্রধানমন্ত্রী  হুনসেনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। ১৭-১৮ মার্চে অনুষ্ঠেয়  অস্ট্রেলীয় শীর্ষ সম্মেলনে হুনসেনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে তারা বিক্ষোভ দেখাবে। সাম্প্রতিককালে হুনসেন হুমকি দিয়েছেন যে, আগামী জুলাই মাসে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে তাকে ভোট না দেয়া হলে  দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে যেতে পারে।
এমনকি তিনি এক বিবৃতিতে আরো বলেছেন, যদি তার অস্ট্রেলিয়া সফরকালে কেউ কুশপুত্তলিকা কিংবা আলোকচিত্র পুড়িয়ে দেয়,  প্রতিবাদ করে তাহলে তিনি তাদের অনুসরণ করবেন এবং দেশে ফিরে এলে তাদেরকে তিনি নির্যাতন করবেন এই প্রেক্ষাপটে অস্ট্রেলীয় অর্থমন্ত্রী ক্রিস ব্রাউন বলেছেন, সিডনিতে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে অপদস্থ কিংবা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীরা যাতে হয়রানি না হয়, সেদিকে তারা নজর রাখবেন।
মি. ক্রিস অবশ্য বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হুনসেন আমাদের অতিথি এবং তার সফরের আগে তিনি নিজেও এ ধরনের মন্তব্য করবেন না, স্বাগতিক সরকার এমনটাই আশা করছেন।
উল্লেখ্য, অস্ট্রেলীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী, যারা টাডমাডো হিসেবে পরিচিত, তাদেরকে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য কারিগরি সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ সুবিধা দিয়েছে। সমপ্রতি আরো ১ লাখ ২৬ হাজার  ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। এতে মিয়ানমার মিলিটারিকে দেয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ লাখ ৯৮ হাজার  ডলার।
১ লাখ ২৬ হাজার ডলারের অতিরিক্ত অর্থের সাহায্যে মিয়ানমারের সেনারা ইংরেজি শিক্ষা নিতে পারবে এবং এই অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়া-থাইল্যান্ড বহুজাতিক সামরিক মহড়া হবে তাতে তারা অংশ নিতে পারবে।
অস্ট্রেলীয় মিত্ররা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, কানাডা, ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন  ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর অভিযান চালানোর কারণে বর্মী মিলিটারির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
পাকিস্তান অবজারভার জানায়, অস্ট্রেলিয়া কেন এখনো এ বিষয়ে নীরব রয়েছে, তার একটি হলো মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের দায়ে যখনই তারা মিয়ানমারের নিন্দা করবে, তখনই এই রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু হিসেবে গ্রহণ করার একটি দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে, যেটা তারা এড়াতে চায়। অস্ট্রেলিয়া রোহিঙ্গা মুসলিম উদ্বাস্তুদেরকে গ্রহণ করতে চায় না।
দুদিনের এই সম্মেলনের মূল এজেন্ডা রয়েছে সন্ত্রাস দমন, মিয়ানমারের  রোহিঙ্গা সংকট এবং দক্ষিণ চীন সমুদ্র পরিস্থিতি। এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু খোলা আকাশের নিচে রেখে যে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাতে  অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম-টার্নবুল সুচিকে কিছু একটা বলবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অস্ট্রেলীয় রাইটস গ্রুপগুলো বলছে, মুসলিম উদ্বাস্তুদের গ্রহণ করতে রাজি হয়নি, যদিও তারা সিরীয় খ্রিস্টান উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.