বিনামূল্যের বই কালোবাজারে কেন? by এমদাদুল হক সরকার

২০১০ সালের ১ জানুয়ারি। চোখে-মুখে আনন্দের উচ্ছ্বাস। প্রথমবারের মতো বই উৎসব হবে। বছরের প্রথম দিনেই স্কুল থেকে নতুন বই নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব। আমার ওই দিনটির মতো প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও সমমানের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য ১ জানুয়ারি মানে উৎসবের দিন, বিনামূল্যে নতুন বই পাওয়ার দিন। গত বছর ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার বই বিতরণ করা হয়েছিল। এবার ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৯ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই বিতরণ করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক বিতরণের এ কার্যক্রম বিশ্বে অতুলনীয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানতে পারলাম শিক্ষার্থীদের প্রতারণা, হয়রানি ও অবৈধ বাণিজ্যের হাত থেকে বাঁচাতে বিনামূল্যে বই বিক্রি বা বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হলেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের দোকানে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে এসব পাঠ্যপুস্তক! এমনকি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃপক্ষও দায়সারা বক্তব্য দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে বলে খবরে উঠে এসেছে। তথ্যমতে, শুধু পাঠ্যপুস্তক নয়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের বইও বিক্রি হচ্ছে বাজারে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এসব বই সরকারি দফতর, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের কাছে থাকার কথা। কিন্তু সেসব বইও দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রাম, খুলনাসহ রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন স্থানে বই বিক্রির বিষয়টি সামনে এসেছে।
এছাড়া বই নিয়ে রমরমা বাণিজ্যের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এমন অভিযোগও উঠে এসেছে যে, বাজারের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে এসব বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। সরকার দেশের শতভাগ শিক্ষার্থীর হাতে এক সেট করে বই তুলে দিলেও শহরকেন্দ্রিক বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুল, কোচিং এবং গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে ভিন্ন ভিন্ন বই ব্যবহার করে। এছাড়া বই হারিয়ে গেলে বা ছিঁড়ে গেলে নতুন বই কিনে থাকে অনেকেই। এসব শিক্ষার্থীকে টার্গেট করেই বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের কাছে বই পৌঁছানো মাত্রই কয়েকটি চক্র বিনামূল্যের সরকারি বই ফটোকপি করে অনুরূপ বই বাজারজাত করে! এর মধ্য দিয়ে বছরজুড়ে বিপুল অংকের বইয়ের বাণিজ্য করছে এসব চক্র। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ সরকারের একটি গণমুখী ও প্রগতিশীল পদক্ষেপ, যা প্রান্তিক ও দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষাবলয়ে অন্তর্ভুক্তির জন্য অত্যন্ত কার্যকর বলে ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের অসৎ কর্মচারীদের জন্য সরকারের এ পদক্ষেপ ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষা মানুষকে ন্যায়ের পথে চলতে শেখায়। শিক্ষকরাই সেই ন্যায়ের পথ দেখান। এহেন জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষক ও তাদের কর্মচারীরা যোগসাজশ করে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে বিনামূল্যে বিতরণের এ বই বিক্রি করে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হল সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। মনে রাখতে হবে, আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ফলে তাদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
এমদাদুল হক সরকার : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.