বিনিয়োগকারীদের ‘অযৌক্তিক হতাশা’

গত দু–তিন দিনকে বাদ দিলে বাজারটা মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৬ হাজার থেকে ৬ হাজার ২০০ পয়েন্টের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। এরপর গত কয়েক দিনে বড় ধরনের যে দরপতন ঘটেছে, তার কোনো যৌক্তিক কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। কেউ কেউ দুটি কারণের কথা বলছেন। তার একটি হচ্ছে মুদ্রানীতি। কিন্তু মুদ্রানীতিতে এমন কিছু নেই, যার জন্য বাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটবে। মুদ্রানীতিতে আমানতের বিপরীতে ঋণের অনুপাত (এডিআর রেশিও) ৮৫ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৮৩ শতাংশ করা হয়েছে। তাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা আগের চেয়ে বাড়িয়ে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছে। কাজেই মুদ্রানীতির কারণে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট হবে বলে মনে করি না। তাই যাঁরা বলছেন মুদ্রানীতির কারণে বাজারে দরপতন হচ্ছে, সেটি ভিত্তিহীন যুক্তি। দ্বিতীয়ত, কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ৮ ফেব্রুয়ারির রায়কে কেন্দ্র করে একধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। রায়কে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হয়, এ নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তার কথা বলা হচ্ছে। যুক্তির খাতিরে আমি যদি ধরে নিই আইনশৃঙ্খলার কিছুটা অবনতি হবে। তাহলে সেটি তো তাৎক্ষণিকভাবে বিনিয়োগকারীদের ওপর প্রভাব ফেলছে না। তাই একটি আশঙ্কাকে কেন্দ্র করে শেয়ার বিক্রির হিড়িক শুরু হওয়া মোটেই যুক্তিসংগত নয়। বরং পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই যুক্তিসংগত ছিল।পড়তি বাজারে শেয়ার বিক্রি করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
বরং পড়তি বাজারে শেয়ার কেনার সময়। আমাদের বাজারে খুচরা বিনিয়োগকারী বেশি। তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বুঝেশুনে বিনিয়োগ করেন না। বরং গুজবে তাঁরা বেশি প্রভাবিত হন। তাই সাম্প্রতিক দরপতনকে আমার মনে হয় বিনিয়োগকারীদের ‘অযৌক্তিক হতাশা’র কারণ। এটি তো গেল সাম্প্রতিক দরপতনের একটি দিক। অন্যদিকে আমাদের বাজারে দীর্ঘমেয়াদি কিছু সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। ভালো কোম্পানির সংখ্যা বাড়ছে না। আবার বাজে কোম্পানির কিছু শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। গত রোববার বাজারে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় দরপতন ঘটেছে, এ কথা সত্য। তবে তাতে খুব বেশি মাত্রায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অযৌক্তিক হতাশা থেকে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা যে ভুল সেটি তারা বুঝতে পারবেন এবং বাজারে সক্রিয় হবেন বলে আমি মনে করি। আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই, বিশ্বের সব স্টক মার্কেট কখনো কখনো কিছুটা অস্থিতিশীল হয়। সব সময় সেটির যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হয়। আমাদের বাজারে সেখানে কিছুটা ঘাটতি দেখা যায়।

No comments

Powered by Blogger.