হামলা ঠেকাতে টার্মিনালে পাহারা বসাবে

দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়ের আগে ও পরে সারা দেশে বাস-ট্রাকের ওপর হামলার আশঙ্কা করছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও একই আশঙ্কার কথা তাদেরকে জানানো হয়েছে। হামলা ঠেকাতে রায়ের আগের দিন ৭ ফেব্রুয়ারি টার্মিনালগুলোয় বাস ও ট্রাক পাহারা বসাতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ও বালু মজুদ রাখতে বলা হয়েছে। সতর্কাবস্থায় থাকারও অনুরোধ করা হয়েছে পরিবহন নেতাদের। মালিক ও শ্রমিকদের পক্ষ থেকেও নেয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি। রাজধানীর চার টার্মিনাল- গাবতলী, মহাখালী, তেজগাঁও, গুলিস্তান ও সায়দাবাদে দিনরাত পাহারা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কেও তারা অবস্থান নেবেন। এদিকে রাজধানীর টার্মিনালগুলোয় পরিবহন নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরই অংশ হিসেবে সোমবার বিকালে মহাখালী বাস টার্মিনালে পরিবহন নেতাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালে একই ধরনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি বাস মালিকরা সম্ভাব্য হামলা ও নাশকতা ঠেকাতে করণীয় নির্ধারণে যৌথসভায় বসতে যাচ্ছেন। অন্যান্য টার্মিনালেও একই ধরনের বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে। পরিবহন নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম যুগান্তরকে বলেন, আদালতের রায় মনঃপূত না হলে বিএনপি নেতাকর্মীরা সারা দেশে সন্ত্রাস করবে- এমন তথ্য আমাদেরকে জানানো হয়েছে। অতীতে দেখেছি, যে কোনো আন্দোলনে বাস-ট্রাকসহ গণপরিবহনকে টার্গেটে পরিণত করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সময় আমাদের প্রায় দুই হাজার গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এবারও একইভাবে হামলার আশঙ্কা করছি। তবে আমরা গাড়ি চলাচল বন্ধ করব না। পাহারা বসিয়ে আমাদের বাস-ট্রাক রক্ষা করব। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, বিগত দিনে দেখেছি আন্দোলন মানেই গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ। ৮ ফেব্রুয়ারি আমরা সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে নির্দেশনা দিয়েছি।
ওই দিন আমাদের ওপর হামলা হলে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওই হামলার বিচার করা না হলে আমরাও পাল্টা আন্দোলনে নামব। তিনি আরও বলেন, রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। ওই বৈঠকে রাতে রাস্তায় গাড়ি পার্কিং না করা এবং টার্মিনালে সারিবদ্ধ অবস্থায় গাড়ি রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কেউ নাশকতা করতে এলে তাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করতে বলা হয়েছে। এ নির্দেশনা আমাদের সব শ্রমিককে জানিয়ে দিয়েছি। জানা গেছে, সোমবার বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মহাখালী টার্মিনালে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ঢাকা উত্তর ট্রাফিকের ডিসি প্রবীর কুমার রায়, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি সাদেকুর রহমান হিরু, মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় পুলিশের পক্ষ থেকে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে রাস্তার ওপর কোনো বাস পার্কিং করা যাবে না; টার্মিনালে সারিবদ্ধভাবে গাড়ি রাখতে হবে; টার্মিনাল ও গাড়িতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ও বালু রাখতে হবে; অপরিচিতদের টার্মিনালে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেলে তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলেন, পাহারার ব্যবস্থা পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদেরই করতে হবে। পুলিশের এত সংখ্যক ফোর্স নেই যে টার্মিনাল পাহারা দিতে পারবে। পরিবহন নেতারা জানান, কোন টার্মিনালে কে কোন পয়েন্টে থাকবেন তা নির্ধারণ করছেন তারা। দিন ও রাতে পালাক্রমে পাহারার ব্যবস্থা করবেন। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবহন শ্রমিকরা অবস্থান নেবেন। এদিকে হামলার ঘটনা ঘটলে করণীয় নির্ধারণে আজ মঙ্গলবার ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে যৌথসভার আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মোতালেব বলেন, আমাদের সম্পদ রক্ষায় আমরা সব পদক্ষেপ নেব। রাস্তায় নিরাপত্তা না পেলে গাড়ি চালানো আমাদের পক্ষে কষ্টকর হবে। আর টার্মিনালের নিরাপত্তা আমরাই নিশ্চিত করতে পারব।

No comments

Powered by Blogger.