সারা দেশে এক দিনে গ্রেপ্তার ৪৩১

পুলিশের চলমান গ্রেপ্তার অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে এক দিনে ২০০ জনকে ‘সন্দেহমূলক’ গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঢাকার বাইরের ২৩ জেলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২১৬ জনকে। এ নিয়ে গতকাল সোমবার সারা দেশে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩১। আর সব মিলিয়ে গত সাত দিনে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১ হাজার ৬৫। ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা সামনে রেখে সপ্তাহজুড়ে ধরপাকড় চলছে, গতকাল এই সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকার সাতটি প্রবেশমুখে ১৩টি তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সকাল থেকে যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। শহরের ভেতরেও স্থায়ী তল্লাশিচৌকিগুলোতে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, হয়রানি ও গ্রেপ্তার-বাণিজ্য করতেই এমন ধরপাকড় চালানো হচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, সরকার উৎখাত ও নাশকতার মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনার অভিযোগে এবং বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি হিসেবে তাঁদের আটক করা হচ্ছে। জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমে বিষয়গুলো দেখছি, নজর রাখছি। আমরা প্রত্যাশা করি, পুলিশ কেবল তাদেরই গ্রেপ্তার করবে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করবে বলে আশা করছি।’ রায় ঘোষণার আগে ও পরের পরিস্থিতি সামাল দিতে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা পাওয়ার পর ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকে বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা যাতে ঢাকায় আসতে না পারেন, সে জন্য এই তল্লাশি শুরু হয়। পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়,
প্রাথমিকভাবে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তল্লাশি কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ আছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী পুলিশের প্রস্তুতি সম্পর্কে গত বৃহস্পতিবার রাজারবাগে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশ সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে থাকবে। ঢাকার কয়েকটি প্রবেশমুখ ঘুরে দেখা গেছে, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় গতকাল উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি রয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড, চিটাগাং রোড ও সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশ নাশকতার যেকোনো চেষ্টা এড়াতে তল্লাশি চালাচ্ছে। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় একটি তল্লাশিচৌকিতে গতকাল বিকেলের দিকে ১০-১২ জন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। দলটির প্রধান উপপরিদর্শক মো. আজিজুল হক বলেন, সোমবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সন্দেহ হলেই দূরপাল্লার যানবাহন ও মোটরসাইকেল থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। গাবতলীতেও সকাল থেকে পুলিশকে তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। মিরপুর বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জানমালের নিরাপত্তার জন্য তাঁরা তল্লাশিচৌকি বসিয়েছেন। পুলিশের উত্তরা বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, আবদুল্লাহপুরে সব সময়ই দুটো চেকপোস্ট থাকে। বিশেষ পরিস্থিতিতে চৌকিতে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। শহরের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে মেয়র হানিফ উড়ালসড়ক পর্যন্ত কমপক্ষে চারটি পয়েন্টে পুলিশকে তল্লাশি চালাতে দেখা যায়। এদিকে ঢাকা জজ আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন থানা থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে গতকাল ২০০ জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের অপরাধকে ‘অধর্তব্য অপরাধ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

No comments

Powered by Blogger.