বাংলাদেশি বলে পাসপোর্ট নিলেন এক রোহিঙ্গা

অবৈধভাবে জাহাজে ভেসে তিন বছর আগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান নরসিংদীর নন্দলালপুরের রিকশাচালক রমজান মিয়া। সেখানে একটি কোম্পানিতে চাকরিও নেন। একদিন মালিকের সহায়তায় মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনে গিয়ে পাসপোর্টের আবেদনপত্র জমা দেন। কয়েক মাস পর জমার রসিদ নিয়ে পাসপোর্ট তুলতে গিয়ে জানতে পারেন তাঁর নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে অন্য একজন সেই পাসপোর্ট নিয়ে গেছেন। মুঠোফোনে রমজান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সাবেক সহকর্মী মিয়ানমারের এক রোহিঙ্গা তাঁর নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে নিজের নামে পাসপোর্ট তৈরি করেছেন। দুটো রসিদ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উভয় রসিদেই গ্রাহকের নাম, বাবা-মায়ের নাম সব একই। কেবল গ্রামের নাম আলাদা। গত বুধবার নরসিংদীর নন্দলালপুর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, মূলত দুটিই একই গ্রাম। কাগজ-কলমে গ্রামটির নাম একটি আর মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত অন্যটি। নন্দলালপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় রমজানের পরিবারের সঙ্গে। মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে রমজানের পরিবার একটি একচালা টিনের ঘরে ভাড়া থাকে। মালয়েশিয়া থেকে টেলিফোনে রমজান মিয়া বলেন, ‘কোম্পানির মালিকের সহযোগিতায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে গিয়ে পাসপোর্ট আবেদন জমা দেওয়ার পর তারা জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি নিয়ে আমাকে একটি রসিদ দেয়। নির্দিষ্ট দিনে গেলে জানায়, আমার পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়ে গেছে। আবার পরের তারিখে পাসপোর্ট আনতে গেলে জানায়, আমার পাসপোর্ট অন্য কেউ নিয়ে গেছে। আমার জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে অন্য কারও নামে কীভাবে পাসপোর্ট হওয়া সম্ভব? জানতে চাইলে হাইকমিশন থেকে তারা জানায়, গ্রামের নাম বদল করা হয়েছে।’ পাসপোর্ট কী করে হলো, জানতে চাইলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার সাইদুল ইসলাম বলেন, পাসপোর্টের বিষয়টি দেখেন মশিউর রহমান। পরে মশিউর রহমানের ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। রমজান বলেন, মালয়েশিয়া আসার পর একই কোম্পানিতে কর্মরত এক রোহিঙ্গার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। পাঁচ বছর আগে ওই রোহিঙ্গা অবৈধভাবেই মিয়ানমার থেকে জাহাজে করে মালয়েশিয়ায় এসেছিলেন। ঘনিষ্ঠতার সুবাদে রমজানের সবকিছুই জানতেন তিনি। এর সুযোগ নিয়ে তিনি হাইকমিশনে ঘুষ দিয়ে রমজানের পাসপোর্ট করিয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। রমজান ওই ব্যক্তির ফেসবুক আইডি সরবরাহ করেন। তাতে দেখা যায়, ওই ব্যক্তির নাম সমীর খান। ফেসবুকে তাঁর কোনো জাতীয়তা পরিচয় নেই। রমজানের মা শেফালি বেগম বলেন, ‘রমজানের পাসপোর্টের ভেরিফিকেশনের জন্য বাড়িতে পুলিশ এসেছিল। তারা আমার ছেলের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ ইত্যাদি যাচাই করে নিয়ে যায়।’ জানতে চাইলে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, নরসিংদীর সহকারী পরিচালক জেবুন্নাহার পারভীন দুটি রসিদ মিলিয়ে দেখে বলেন, এই পাসপোর্টগুলোর জন্য আবেদন করা হয়েছে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসে। সেখানে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি। অস্তিত্বহীন জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ব্যবহার করে বাংলাদেশি নন এমন কারও পক্ষে পাসপোর্ট করা সম্ভব কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো পুলিশ ভেরিফিকেশনে কোনো সমস্যা হতে পারে। জানতে চাইলে নরসিংদীর ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘কেউ যদি এই বিষয়ে অভিযোগ দেন তবে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

No comments

Powered by Blogger.