রাহুল কি পারবেন কংগ্রেসের ভাগ্য বদলে দিতে?

ভারতে কংগ্রেস পার্টির নতুন নেতা হয়েছেন রাহুল গান্ধী। এমন এক সময় তিনি ১৩২ বছরের পুরোনো এই দলের কান্ডারি হলেন - যখন দলটি ভারতের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য লড়াই করছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কংগ্রেস সভাপতির পদে হলেন রাহুল গান্ধী। সোমবার এই নিয়োগ নিশ্চিত করা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি দায়িত্ব নেবেন ১৬ই ডিসেম্বর। বিবিসির ভারত সংবাদদাতা স্যৌতিক বিশ্বাস লিখছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে - যেবার নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ক্ষমতায় আসে - সেবার কংগ্রেস জনগণের ভোটের মাত্র ২০ শতাংশ পেয়েছিল।
শুধু তাই নয় লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মাত্র ৮ শতাংশ বা ৪৪টি আসন পেয়েছিল দলটি। রাজ্য স্তরে ভারতে বর্তমানে মাত্র দুটি বড় রাজ্য পাঞ্জাব ও কর্ণাটকে কংগ্রেস ক্ষমতাসীন আছে। ২০১৪ সালের পর তারা ৬টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে হেরেছে। কোন রাজ্যে একবার হারলে তারা আর সেখানে ফিরে আসতে পারছে না - এটাও দেখা গেছে, যেমন পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ুতে। গুজরাট আর হিমাচল প্রদেশের নির্বাচনে তাদের সম্ভাবনাকে ‘মিশ্র’ বলেই মনে করা হয়। গত দুটি নির্বা্চনে দেখা গেছে শহর ও গ্রাম - উভয় এলাকার ভোটাররাই কংগ্রেসকে ত্যাগ করেছে। বিভিন্ন বর্ণগত সম্প্রদায় ও সংখ্যালঘুদের মধ্যে তাদের সমর্থন কমেছে। তাই এখন প্রশ্ন হলো রাহুল গান্ধী কি কংগ্রেসের এই দুর্দশার অবসান ঘটাতে পারবেন? গান্ধী পরিবারের পঞ্চম প্রজন্মের এই রাহুল গান্ধীকে অনেকেই মনে করেন একজন ‘অনিচ্ছুক’ রাজনীতিবিদ বলে। তার মা সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেস নেত্রী হয়ে চেষ্টা করেও দলের মোড় ফেরাতে পারেননি। তবে রাহুল গান্ধী যখন সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান - সেসময় কিছু একটা ঘটেছিল, তার সফর বেশ ভালোভাবে গৃহীত হয়েছিল বিভিন্ন মহলে। সামাজিক মাধ্যমেও তার প্রচারণা শেষ পর্যন্ত একটা শক্তি অর্জন করেছে। তার মন খুলে কথা বলা, রসবোধ, - এগুলো একটা ভালো ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। বিশেষ করে গুজরাটের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেখা গেছে যে তিনি তার কোন্দল-প্রবণ দলের নেতাদের উজ্জীবিত করতে পেরেছেন। বেকারত্ব, অসহিষ্ণুতা, অর্থনীতি, নোট বাতিল করা, নরেন্দ্র মোদি সরকারের অ-বাস্তবায়িত প্রতিশ্রুতি - এগুলোর ব্যাপারে তার স্পষ্ট কথাবার্তা ভোটাররা পছন্দ করেছেন। এতে তার দরও কিছুটা উজ্জীবিত হয়েছে বলে মনে হয়, কিন্তু নির্বাচিত হতে হলে তাকে আরো অনেক বেশি রাজনৈতিক দক্ষতা দেখাতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক আগেই কংগ্রেস ভারতের রাজনীতির খেই হারিযে ফেলেছিল। ভারত যে এক-দল প্রধান রাজনীতি থেকে অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক বহু-দলীয় রাজনীতির দিকে যাচ্ছে - কংগ্রেস তা বুঝে তার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলোও তাদের ক্ষতি করেছে। অনেকের মত হলো, রাহুল গান্ধীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে - তার দলের পরিবারতন্ত্রের ঐতিহাসিক বোঝা তিনি কিভাবে বহন করবেন। নরেন্দ্র মোদি তার সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসাকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগিয়েছেন।
কিন্তু রাহুল একবার আমেরিকায় এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ভারত এভাবেই চলে। এক অর্থে রাহুল গান্ধী হয়তো ঠিকই বলেছেন। ভারতে আঞ্চলিক দলগুলোতেও পরিবারতান্ত্রিক নেতৃত্ব দেখা যায়। বিজেপিও এর থেকে মুক্ত নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলেন, ভারতীয় ভোটাররা এ ক্ষেত্রে খুব একটা বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন না। গত সাধারণ নির্বাচনের সময় দেখা গেছে, ভারতের হিন্দু ভোটারদের মাত্র ১৬ শতাংশ পেয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের ভোটারদের প্রতি ১০ জনের ৬ জন ছিল হয় মুসলিম, নয় উপজাতীয়, শিখ বা খ্রিষ্টান। বিজেপির ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ১০ জনে মাত্র তিন জন। একজন বিশ্লেষক বলেন, রাহুল গান্ধীর চ্যালেঞ্জ হলো বিজেপির মতো হিন্দুত্ববাদের কপি না হয়েও হিন্দুদের ভোট টানার ক্ষমতা অর্জন করা। হিন্দুদের বিচ্ছিন্ন না করেও হিন্দু-জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করা। হয়তো তার সেরা কৌশল হবে সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা - যখন নরেন্দ্র মোদিও কংগ্রেস যে ভুল করেছিল ঠিক সেই ভুলগুলো করতে শুরু করবেন। স্পষ্টতই, রাহুল গান্ধীর সামনে অনেক কঠিন সময় পড়ে রয়েছে।
সূত্র: বিবিসি

No comments

Powered by Blogger.