ইসরাইলের আহ্বান নাকচ ইইউর

পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস বা জেরুসালেম শহরকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকাকে অনুসরণ করার জন্য যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহুর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি। সোমবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসলেসে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি আরো বলেছেন, বায়তুল মুকাদ্দাস ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ঐকমত্যকেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন মেনে চলবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য নেতানিয়াহু প্যারিস থেকে ব্রাসেলসে গেছেন। ২২ বছরের মধ্যে এটা ইসরাইলের কোনো প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়ন সফর। গত বুধবার বায়তুল মুকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপক প্রশংসা করেন নেতানিয়াহু। কিন্তু ইউরোপের বহু দেশ এর বিরোধিতা করেছে। এমনকি ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ চেক প্রজাতন্ত্র বলেছে, ট্রাম্পের পদক্ষেপ শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য খারাপ। তবে নেতানিয়াহু অনেকটা পীড়াপীড়ি করে বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব দেশ কিংবা বেশিরভাগ দেশ জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেবে এবং তেল আবিব থেকে তাদের দূতাবাস সরিয়ে জেরুসালেমে নেবে।’
নেতানিয়াহুর ক্ষোভ
ইহুদিবাদী ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইউরোপ সফর করার আগে ইউরোপীয় দেশগুলোর দ্বৈত ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেরুজালেম খ্যাত বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করেছেন। ওই ঘোষণার ব্যাপারে ইউরোপ একপেশে অবস্থান নিয়েছে। নেতানিয়াহু বলেছেন ইউরোপ অবশ্যই সম্মান পাবার যোগ্য কিন্তু তাদের দ্বৈত ভূমিকা গ্রহণযোগ্য নয়। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষেদে দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে অন্তত ১৫টি খসড়া প্রস্তাবেও ইউরোপীয় দেশগুলো সমর্থন দিয়েছে। ওই প্রস্তাবগুলোতে জেরুসালেমকে ‘অধিকৃত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণেও নেতানিয়াহু ইউরোপের প্রতি ক্ষুব্ধ। অবশ্য ইসরাইলের সঙ্গে আরও বহু বিষয়েও ইউরোপের দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা কিংবা এই শহরে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করাই আসল কারণ নয়। বিগত দুই দশক ধরেই ধীরে ধীরে ইসরাইলের ব্যাপারে ইউরোপের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে। ইউরোপীয় সরকারগুলো এখনও দাবি করছে তারাই ইসরাইলকে টিকিয়ে রেখেছে। তবে বুদ্ধিজীবী মহলে এবং ইউরোপের যুবকদের মাঝে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সমালোচনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ অনেক। যেমন ইউরোপের মধ্যবয়সীদের বিপরীতে যুবকরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদি গণহত্যাকে অন্যায় মনে করছে না।
তাছাড়া বর্তমান ইসরাইলি সরকারের পাশবিক আচরণও ইউরোপীয় তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রভাব ফেলেছে। ইসরাইলি অবরোধের কারণে অন্তত ১৫ লাখ গাজাবাসী কার্যত বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারাগারে বসবাস করছে। আন্তর্জাতিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনীদের ভূখণ্ড জবরদখল করে সেখানে ইহুদি উপশহর নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গণমাধ্যমসহ সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে ইউরোপের তরুণরা এখন ফিলিস্তিনীদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারছে। এখন আর আগের মতো সত্য লুকিয়ে রাখার সুযোগ নেই। ইউরোপের বুদ্ধিজীবী শ্রেণী, ভার্সিটির ছাত্র এবং তরুণরা যুক্তি খুঁজে পায় না- কেন ইসরাইলি সেনারা ফিলিস্তিনীদের ঘরবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে অথচ পাথর ছোঁড়ার কারণে ফিলিস্তিনী যুবকদেরকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব কারণেই ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে ইউরোপের তরুণদের মাঝে প্রতিবাদ বিক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুদস শরিফকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার মার্কিন ঘোষণায় ইউরোপে তাই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.