ডাকসু নির্বাচন

‘আমরা ডাকসু নির্বাচন করব। তবে এর সঙ্গে যেহেতু অনেকগুলো অংশীজন জড়িত, তাই একটু সময় লাগবে। দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন না হওয়ার যে সংস্কৃতি চলে আসছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।’ এ রকম আশ্বাসবাণী শুনিয়ে ওয়ালিদ আশরাফের অনশন ভাঙালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। স্নাতকোত্তর পর্বের এই ছাত্র ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার দাবিতে একাই দুই সপ্তাহ ধরে অনশন করছিলেন। কিন্তু উপাচার্য যে বললেন ‘একটু সময় লাগবে’, এই সময় কত লম্বা হবে, তা কেউ জানে না। কারণ, ওয়ালিদের অনশন চলাকালীন দুই সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো পর্যায়ে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কোনো ছাত্রসংগঠন বা অংশীজনের সঙ্গেও তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব এড়িয়ে চলাই শ্রেয় মনে করে আসছে, তা বেশ স্পষ্ট। নইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির আহ্বানকেও কেন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না? এ ছাড়া গত ১০ অক্টোবর হাইকোর্ট ছয় মাসের মধ্যে সিনেট পূর্ণাঙ্গ করার যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তাতেও ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ আছে। কেননা, ডাকসুর প্রতিনিধিত্ব ছাড়া সিনেট পূর্ণাঙ্গ হয় না। অর্থাৎ আদালত কর্তৃক সিনেট পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশনা পরোক্ষভাবে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশনা হিসেবেও বিবেচ্য হতে পারে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১০ অক্টোবর থেকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট পূর্ণাঙ্গ করতে হলে এই সময়সীমার মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন করা আবশ্যক। সুতরাং আর সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই।
এ ছাড়া বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোসহ ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং তাঁদের দাবির প্রতি সমর্থন-সংহতি প্রকাশকারী প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাবেক ছাত্রনেতাদের মতামতও আর অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। তাই ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি দ্রুত শুরু করা উচিত। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, ১৯৯১ সাল থেকে ২৬ বছর ধরে দেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। অথচ ১৯৯০ সালে বিপুল গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে গণতন্ত্রে প্রবেশ করেছি। জনপ্রতিনিধিত্বশীল শাসনব্যবস্থায় দেশ পরিচালিত হচ্ছে কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছে—এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলেই মনে হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক এবং এতে একচেটিয়া কর্তৃত্বপরায়ণতার প্রকাশ ঘটছে। অবিলম্বে এটা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.