রেলের ইঞ্জিন-বগি ক্রয়সহ ১৬ প্রকল্প অনুমোদন

যাত্রীদের আরামদায়ক ও নিরাপদ রেলভ্রমণ নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এজন্য ২০টি ইঞ্জিন এবং ১৫০টি যাত্রীবাহী কোচ কেনা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পসহ ১৬ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১১ হাজার ৮৭০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৩ হাজার ৮৩৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে ৩০০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় পরিকল্পনা সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব মফিজুল ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কে এম মোজ্জাম্মেল হকসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এখন থেকে নতুন রাস্তা তৈরির চেয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলোকে আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাছাড়া রাস্তা তদারকি, মেরামত বা সংস্কারের সময় গুণগতমান বজায় রাখতে এলজিইডিকে দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাস্তার যেখান দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে, সেখানে পাইপ বসাতে হবে, যাতে রাস্তা ভেঙে না যায়। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়ার সময় রাস্তা সম্প্রসারণের কারণে আপাতত এলইডি লাইট স্থাপন এবং ৪টি চলন্তসিঁড়িযুক্ত (এসকেলেটর) ফুটওভারব্রিজ স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ কারণে মোট প্রকল্প ব্যয় কম বা বেশি হতে পারে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৮৬টি মিটার গেজ ও ৯৬টি ব্রড গেজসহ ২৮২টি ইঞ্জিন রয়েছে। মেকানিক্যাল কোড ও ডিজাইন স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী এগুলোর অর্থনৈতিক মেয়াদ ২০ বছর।
যার মধ্যে ১৬৮টির বয়স ৩০ বছর অতিক্রম করেছে। এছাড়া রেলওয়েতে ১ হাজার ১৬৫টি যাত্রীবাহী মিটার গেজ কোচ রয়েছে। মেকানিক্যাল কোড ও ডিজাইন স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী যাত্রীবাহী এসব কোচের অর্থনৈতিক মেয়াদ ৩৫ বছর। যার মধ্যে ৪৫৬টি যাত্রীবাহী কোচের বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম করেছে, ১৩৫টির মেয়াদ ৩১ থেকে ৩৪ বছর। যাত্রী চাহিদার কারণে মেরামতের মাধ্যমে মেয়াদ উত্তীর্ণ যাত্রীবাহী কোচগুলো ব্যবহার করা হলেও তা আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন আরামদায়ক ও নিরাপদ নয়। এজন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য আধুনিক ইঞ্জিন ও আরামদায়ক কোচ কেনার জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৭৯৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিপিএলে আইন অনুযায়ী কুমিল্লা দল ফাইনালে খেলার কথা। কিন্তু এটা ভুল করে এরকম করা হয়েছে। আমি তখনই পারতাম তামিম ইকবালের হাত ধরে মাঠ থেকে বেরিয়ে আসতে। কিন্তু সেটা দেশের ক্রিকেটের জন্য ক্ষতি হতো। তাছাড়া কেউ না কেউ ফোন করতেন আবার মাঠে ফিরে যেতে। সেজন্য ক্রিকেটের স্বার্থে আমি এমন কিছু করিনি। এ ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এরকম না হয়। একনেকে অনুমোন পাওয়া কয়েকটি প্রকল্প হচ্ছে- ময়মনসিংহ অঞ্চল পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যয় হবে ৩ হাজার ১৮৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। রংপুর বিভাগ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যয় হবে ২ হাজার ৮৮৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। রাজশাহী বিভাগ (সিরাজগঞ্জ জেলা ব্যতীত) পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যয় হবে ২ হাজার ৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, ব্যয় হবে ১৭০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। কৃষি তথ্য সার্ভিস আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ শক্তিশালীকরণ, ব্যয় হবে ৬৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদ্যমান পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যয় হবে ২ হাজার ৫৬১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সিলেট, বরিশাল, রংপুর এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপন, ব্যয় হবে ৩৫৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যয় হবে ৪৯১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। শিশু ও নারী উন্নয়নে সচেতনমূলক যোগাযোগ কার্যক্রম, ব্যয় হবে ১৩৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। চক্ষু স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও অন্ধত্ব দূরীকরণ প্রকল্প, ব্যয় হবে ৭৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং ব্রিজগুলোর উন্নয়নসহ আধুনিক যান যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও সড়ক আলোকায়ন, ব্যয় হবে ৬৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ত্রিশাল-বালিপাড়া-নান্দাইল জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতকরণ, ব্যয় হবে ১১৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। মিরসরাই ১৫০ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, ব্যয় ১ হাজার ৬৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যয় ৩২৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিরতা, ময়মনসিংহ ও কালকিনি, মাদারীপুর ইসলামিক মিশন হাসপাতাল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ এবং বায়তুল মোকাররম ডায়াগনস্টিক সেন্টার শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

No comments

Powered by Blogger.