তদন্তে কিছুই পেল না পুলিশ

নারীর ছয় টুকরা লাশ। পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড—এটা স্পষ্ট। পুলিশের ভাষ্য, এ জন্য লাশ উদ্ধারের পর ‘গুরুত্ব’ দিয়ে তদন্ত হয়েছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। দেড় বছরে পুলিশের দুই দফার তদন্তেও চিহ্নিত হয়নি খুনি। বের করা যায়নি ওই নারীর পরিচয়ও। সর্বশেষ থানা-পুলিশের পর পিবিআইও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে আদালতে। খুনি চিহ্নিত করতে না পারা তদন্তের গাফিলতি বলছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি রতন কুমার রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে মানুষকে টুকরা টুকরা করে লাশ গুমের চেষ্টা চলতে পারে না। পুলিশেরই দায়িত্ব লাশের পরিচয় ও আসামিদের শনাক্ত করা। নইলে আসামিরা এ ধরনের ঘটনা বারবার করতে থাকবে। ২০১৬ সালের ৮ জুন নগরের বন্দর থানার আনন্দ বাজার এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ময়লার ডিপোতে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর ছয় টুকরা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শরীর থেকে মাথা, ডান হাত, দেহের ঊর্ধ্বাংশ, ঊরু, হাঁটুর ওপরের ঊরুর অংশ ও ডান পায়ের হাঁটু থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন ছিল। আনুমানিক ৩০ থেকে ৩২ বছর বয়সী ওই নারীর চেহারা ছিল বিকৃত। পুলিশ সূত্র জানায়, লাশের টুকরাগুলো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়। এই ঘটনায় বন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) প্রণব কান্তি দাশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
প্রথমে মামলাটি তদন্ত শুরু করেন বন্দর থানার এসআই সাইফ উল্লাহ। তিনি বদলি হলে এসআই সাজেদ কামাল তদন্ত করেন। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি এই মামলায় কোনো আসামিকে শনাক্ত করতে না পেরে তিনি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। আদালত প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে ১১ এপ্রিল শুনানি শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে পিবিআই চট্টগ্রামের পুলিশ পরিদর্শক মো. কাওসার আলম ভূঁইয়া ১৪ ডিসেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। দুই পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, হত্যাটি পরিকল্পিত। এ জন্য আসামিরা লাশ গুমের জন্য ময়লার ডিপোতে শরীরের বিভিন্ন অংশ ফেলে যায়। আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এবং নগরের বিভিন্ন থানায় নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনরা লাশটির পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। লাশ ও আসামির পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় হত্যার ঘটনা সত্য হলেও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলো। ভবিষ্যতে রহস্য উদ্‌ঘাটন করা গেলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হবে। জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক মো. কাওসার আলম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। চট্টগ্রাম নগরের পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণের শুনানির জন্য রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.