পুকুরমালিকের মামলা, বিপাকে কৃষক

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে দুটি বিলের ফসলের মাঠ পানাপুকুরে পরিণত হয়েছে। তার প্রতিকার চাইতে গিয়ে এবার সেই কৃষকেরাই উল্টো বিপাকে পড়েছেন। একজন পুকুরমালিক কৃষকদের নামে আদালতে মামলা করেছেন। কৃষকেরা গত শনিবার আদালতের নোটিশ পেয়েছেন। কয়েকজন কৃষক বলেন, আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। এ দুই মাস পর আর তাঁদের পানি বের করেও কোনো লাভ হবে না। আবাদের মৌসুম পার হয়ে যাবে। জমি থাকতেই এবার তাঁদের না খেয়ে মরতে হবে। তবে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার সাদাত বলেন, তিনি ভুক্তভোগী কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন। যাতে তাঁদের কোনো বিপদ না হয়, সেটা তিনি দেখবেন। উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের অনুলিয়ারবিল ও পোড়াবিলে ধান, পান, মরিচ, আলু, লাউসহ সব ধরনের সবজি চাষ হয়। বর্ষায় বিলের পানি একটি সরকারি খাল দিয়ে বারনই নদে নেমে যায়। এ জন্য তাঁদের ফসলের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে কয়েকজন চাষি বলেন, ছয় বছর ধরে এই বিলে পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে। পুকুরমালিকেরা সাধারণ চাষিদের বাধ্য করছেন জমি বিক্রি করতে। এমনকি জোর করেও জমি দখলে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। খালের মুখে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করার কারণে প্রায় ৩০০ একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এদিকে এ ঘটনা নিয়ে গত ৩০ নভেম্বর ‘দুর্গাপুরে ফসলের মাঠ এখন পানাপুকুর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সে সময় ভুক্তভোগী কৃষকেরা ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুকুরের পাড় কেটে পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবে কয়েকজন কৃষক বলেন, যে পরিমাণ গভীর করে নালা কাটা হয়েছিল, তাতে পুরো বিলের পানি নিষ্কাশন হয়নি। এ কারণে ফের তাঁরা (কৃষকেরা) ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেন। অবশেষে গত মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানি বের করে দেওয়ার জন্য আটজন চৌকিদার পাঠানো হয়। কিন্তু শামীম রেজা নামের একজন পুকুরমালিক তাতে বাধা দেন। চৌকিদারেরা ফিরে যান। পরে গত শনিবার দুর্গাপুর থানার পুলিশ ১০ জন কৃষকের কাছে আদালতের নোটিশ পৌঁছে দেন। শামীম রেজা গত বুধবার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁদের নামে ওই মামলা করেন। তিনি মামলার এজাহারে বলেন, তিনি শান্তিপ্রিয় ব্যক্তি। গত মঙ্গলবার প্রতিপক্ষ (১০ কৃষক) হাতে হাঁসুয়া, কোদাল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁর পুকুরের পাড় কেটে মাছ ও পানি বের করে ফেলতে চান। বাধা দিলে তাঁরা তাঁকে জখম-খুন করার হুমকি দেন। পুকুরে বিষ দিয়ে মাছের ক্ষতি করারও হুমকি দেন। শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কায় তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারামতে পুকুরে প্রবেশ রোধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা এবং একই সঙ্গে সেখানে স্থিতি অবস্থায় বজায় রাখার আবেদন করেন। পরে আদালত সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল ও থানার ওসিকে শান্তি রক্ষার আদেশ দিয়েছেন। ওসি বিষয়টি দেখার জন্য এএসআই আবুল কালাম আজাদকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এএসআই গতকাল রোববার রাতে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে নোটিশটি কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।’ ভুক্তভোগী কৃষক মজিবর প্রামাণিক বলেন, তাঁরা কাউকে হুমকি দেননি। পানি বের করার কাজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। সেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও দুর্গাপুর থানার পুলিশ উপস্থিত ছিল। কেউ যাতে আর পানি বের করার জন্য শামীমের পুকুরের কাছে না যেতে পারে, এ জন্য তিনি (শামীম) আদালতে ওই মামলা করেছেন। এ ব্যাপারে শামীমের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

No comments

Powered by Blogger.