চট্টগ্রামে তীব্র গ্যাস সংকট

তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে চট্টগ্রাম নগরীর আবাসিক এলাকায় বেশিরভাগ সময় চুলা জ্বলছে না। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সাত-আট ঘণ্টা চুলার অবস্থা থাকে নিভু নিভু। আবাসিকের পাশাপাশি এই বিপুল ঘাটতির খেসারত দিতে হচ্ছে চট্টগ্রামের শিল্প খাতের গ্রাহকদেরও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংকট আরো প্রকট হতে পারে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকসংখ্যা তিন লাখ ৭০ হাজার।

সেই সঙ্গে শিল্প–কারখানাসহ দুই হাজার ৭৮৭ বাণিজ্যিক গ্রাহক রয়েছে। আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রামে দৈনিক ৪৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। এর বিপরীতে বর্তমানে চট্টগ্রামে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে দৈনিক গড়ে ১৯০ মিলিয়ন ঘনফুট। যা চাহিদার অর্ধেকের চেয়েও কম। এই বিপুল ঘাটতির ভুক্তভোগী হলেন নগরীর আবাসিক ও শিল্প খাতের গ্রাহকরা।

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মুরাদপুর, বিবির হাট, হামজারবাগ হিলভিউ আবাসিক এলাকা, মোমিন রোড, জামালখান, রহমতগঞ্জ, আন্দরকিল্লা, ঘাটফরহাদবেগ, বৌবাজার, ডিসি রোড, চকবাজার, বড়মিয়া মসজিদ, কাপাসগোলা, কেবি আমান আলী রোড, আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, মধ্যম হালিশহর, মির্জাপুল, চান্দগাঁও ফরিদার পাড়া, বটতল মাজার গেইট ও মদুনাঘাটসহ বিশাল এলাকাজুড়ে বাসিন্দারা সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্যাস পাচ্ছে না। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্যাস থাকে না।

এই ব্যাপারে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)-এর ম্যানেজার (কাস্টমার এন্ড মেইনটেনেজ) ইঞ্জিনিয়ার অনুপম দত্ত জানান, চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ দিনদিন কমে যাচ্ছে। এ সংকট আরো প্রকট হতে পারে। এলএনজি না আসা পর্যন্ত এই সংকট কাটবে না। শুধু আবাসিকে নয় শিল্প–কারখানাসহ বাণিজ্যিক সব গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়বে।

গ্যাসের যে চাহিদা, তার অর্ধেকেরও কম জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা ৪৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। জাতীয় গ্রিড থেকে এখন প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২০০ থেকে ১৯০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ কারণে চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকট তীব্র হয়ে উঠছে।

চট্টগ্রামে চকবাজার, মেহেদীবাগ, জামালখান, মোমিন রোড, রহমতগঞ্জ, আন্দরকিল্লা, কেবিআমান আলী রোড, বাকলিয়া এলাকায় সংকট বেশি। কারণ এই এলাকায় গ্রাহক বেড়ে গেছে।

কিন্তু গ্যাস সরবরাহ বাড়েনি। আগের পাইপ লাইন দিয়েই গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এসব এলাকার প্রবেশ মুখের গ্রাহকরা কিছু কিছু পেলেও ভেতরের গ্রাহকরা পাচ্ছেন না।

চট্টগ্রামে এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য লিকুফাইড ন্যাচারাল গ্যাসের (এলএনজি) দিকে তাকিয়ে আছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। আগামী বছরের এপ্রিল–মে মাসের দিকে কাতার থেকে এই এলএনজি গ্যাস আমদানি শুরু হবে বলে জানান কেজিডিসিএলের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে আবাসিকে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৫৪ মিলিয়ন ঘনফুট। জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় আবাসিকে চাহিদার অর্ধেকেরও কম সরবরাহ করা হচ্ছে।

সংকট থাকায় পিডিবির গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে এখন আর গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তবে চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট আর বেশি দিন থাকবে না। আগামী বছরের এপ্রিল–মে’র দিকে কাতার থেকে এলএনজি গ্যাস আমদানি শুরু হবে। তখন সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।

এদিকে গ্যাসের অভাবে প্রতিদিন চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না অনেক শিল্প–কারখানা। এর ফলে ওইসব শিল্প–কারখানায় উৎপাদন অনেক কমে গেছে।

এর ফলে অনেক শিল্প মালিককে লোকসান গুণতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

No comments

Powered by Blogger.