বাস-ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের জন্য হাহাকার

ঈদ সামনে রেখে বাস ও ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের হাহাকার চলছে। ২২, ২৩ ও ২৪ জুনের বাসের টিকিট পাচ্ছেন না সাধারণ যাত্রীরা। কাউন্টারগুলো থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, ওই সব দিনের টিকিট নেই। অপরদিকে ট্রেনের ২২ জুনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয় মঙ্গলবার। এদিন টিকিট সংগ্রহের জন্য কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। আগের রাত থেকে অপেক্ষা করেও অনেকেই কাক্সিক্ষত টিকিট পাননি। কেউ কেউ এসি টিকিট চেয়ে না পেয়ে সাধারণ টিকিট কেটে ফিরে গেছেন। তবে টিকিট কাটতে আসা যাত্রীদের দুর্ভোগ কিংবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট না পাওয়াকে স্বাভাবিক ঘটনা বলে অভিহিত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এদিকে লঞ্চের আগাম টিকিট বিক্রি আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে। তবে ঘোষণা ছাড়াই লঞ্চের প্রথম শ্রেণীর (কেবিন) টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানিয়ে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হকসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি কার্যক্রম দেখতে মঙ্গলবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শন করেন। এ সময় লাইনে দাঁড়ানো সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী। স্টেশন পরির্দশন শেষে দুপুরে রেলপথমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, এবার টিকিট কালোবাজারে নেই। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। টিকিটপ্রত্যাশী কেউ তার কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। সরেজমিন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেখা গেছে, ট্রেনের ২২ জুনের আগাম টিকিট সংগ্রহের জন্য সোমবার রাত থেকেই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। টিকিটপ্রত্যাশীদের অনেকেই স্টেশনেই সেহরি করেছেন। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা শেষ হয়ে যায়। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার পর বিক্রেতারা জানিয়ে দেন, পূর্বাঞ্চলে চলাচলকারী সুবর্ণ, সোনার বাংলা, তূর্ণানিশীথা এক্সপ্রেসসহ পশ্চিমাঞ্চলের সিল্কসিটি, পদ্মা, অগ্নিবীণাসহ বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট নেই। ওই সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শত শত টিকিটপ্রত্যাশী সুর-চিৎকার শুরু করে। টিকিটের জন্য ১৭-১৮ ঘণ্টা লাইনে যারা দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাদের অনেককেই টিকিট ছাড়াই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। তবে এত কষ্টের পর যারা টিকিট কাটতে পেরেছেন, তাদের চোখেমুখে ছিল আনন্দের ঈদ-বার্তা। রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে আসা আরিফুল ইলাম ও সুমন খান জানান, তিনি সোমবার রাতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ৫ নম্বর কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়ান। ওই সময় তারা লাইনের প্রায় ১৫০ জনের পেছনে ছিলেন। আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি কেয়ারটেকারের কাজ করেন। বাড়ির মালিকের পরিবারের জন্য ৮টি টিকিট কাটার জন্য স্টেশনে এসেছেন। সকাল ১০টার সময় কাউন্টার থেকে বলা হয়, চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট নেই। ওই সময় তিনি ৩০-৩৫ জনের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। টিকিট না পেয়ে তিনি লাইন থেকে সরে পড়েন। বললেন, তার মালিক বলেছেন পরের দিনের জন্য আবারও লাইনে দাঁড়াতে। রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেসের ৪টি এসি চেয়ারের জন্য সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি সোমবার ইফতারি শেষে লাইনে দাঁড়ান। তিনি জানান, শুরুতে ৮০-৮৫ জনের পেছনে দাঁড়ালেও ভোররাতের দিকে কিছু লোক জোর করে লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। ফলে সেই লাইনে তার স্থান হয় ২০০ জনের পেছনে। তিনি জনান, একশ্রেণীর লোক জোর করে লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ১০টার সময় মাইকে ঘোষণা হয়, সিল্কসিটি ট্রেনের টিকিট বিক্রি শেষ। এরপর আর তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। কিছুটা নিশ্চুপ থেকে ক্ষোভ উগরে বলেন, ‘সারা রাত কষ্ট করে টিকিট না পাওয়া যে কত কষ্টের, তা বোঝানো সম্ভব নয়।’ অনেক যাত্রী আবার টিকিট কাটতে পেরে মিডিয়াকর্মীদের কাছে খুশির কথাও জানিয়েছেন। জিল্লুর রহমান নামে এক যাত্রী জানান, তিনি লাইনের ৩৭ জনের পেছনে ছিলেন। সুবর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনের ৪টি এসি টিকিট কাটতে পেরেছেন। কেউ কেউ আবার অভিযোগ করেছেন, এসি টিকিট দেয়া হচ্ছে না। কেবিনের টিকিট তো একেবারেই দেয়া হচ্ছে না। কেউ কেউ জানান, লাইনের অগ্রভাগে যারা দাঁড়াতে পারছেন, তারাই কেবল টিকিট কাটতে পেরেছেন। এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী যুগান্তরকে বলেন, ‘কাউন্টার থেকে টিকিট দেয়া হচ্ছে না, কিংবা যাত্রীরা টিকিট কাটতে পারছে না- এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা-বানোয়াট।’ তিনি বলেন, ‘৬৫ শতাংশ টিকিট কাউন্টার থেকে দেয়া হচ্ছে।
একটি টিকিটও ধরে রাখার কোনো পদ্ধতি নেই। সীমিত টিকিট থাকায় অতিরিক্ত যাত্রীরা টিকিট পাচ্ছেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘একেকটি আন্তঃনগর ট্রেনে ৭৫০ থেকে ৯০০টি টিকিট থাকে। লাইনে দাঁড়ানো ১৫০ থেকে ২০০ জনের মধ্যেই ৬৫ শতাংশ টিকিট শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ সামনে দাঁড়ানো প্রায় সবাই ৪টি করে টিকিট কাটছে।’ তিনি বলেন, ‘সীমিত টিকিটের বাইরে কাউকে টিকিট দেয়া সম্ভব নয়। ফলে লাইনে দাঁড়ানো অতিরিক্ত যাত্রীরা যখন টিকিট কাটতে পারছেন না, তখন তাদের কিছুই করার থাকে না।’ এদিকে বাসের আগাম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার কাউন্টারের সামনে তেমন ভিড় দেখা যায়নি। সকাল থেকে গাবতলী, কল্যাণপুর ও আশপাশ এলাকার কাউন্টারগুলো ছিল ফাঁকা। সোমবার আগাম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনেই বেশিরভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার চাপ কম ছিল বলে জানিয়েছেন হানিফ পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার মো. মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিনই সব বিক্রি শেষ। ২১, ২২ ও ২৩ জুনের টিকিট সোমবারই বিক্রি হয়ে গেছে।’ তিনি জানান, সড়কে যানজট থাকায় গাড়ি ঠিকমতো ঢাকায় ঢুকতে পারছে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ঈদে ঘরমুখো মানুষের নাকাল অবস্থায় পড়তে হতে পারে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কল্যাণপুরে হানিফ বাস কাউন্টারে টিকিট নিতে আসেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আবদুল মতিন। তিনি বলেন, ২২ জুনের যশোরের টিকিট পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে ২১ জুনের টিকিট নিয়েছি।

No comments

Powered by Blogger.