সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচনের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প আর কী হতে পারে? by মো. রুবাইয়াতুল ইসলাম

১. বছর দেড়েক পড়েই দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদকাল শেষ হতে চলেছে । যদিও এই সংসদ নির্বাচনটি ঘিরে বিতর্কের যেন শেষ নেই । একপক্ষ দাবি করে এটি দেশের সাংবিধানিক ব্যবস্থা অটুট রাখার নির্বাচন, অপর পক্ষের দাবি এটি আওয়ামীলীগ তথা ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা আটকে রাখার নির্বাচন। তবে বাস্তবতা হল এই নির্বাচনটির জন্য কারও দায় কম নয়। সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারও আশ্বস্ত করেছেন যে আগামী সংসদ নির্বাচনটি ১৫ই ফেব্রুয়ারী কিংবা ৫ই জানুয়ারীর মত প্রশ্নবিদ্ধ হবার কোন সম্ভাবনা নেই। অতএব দেশবাসী একটি স্বচ্ছ জাতীয় নির্বাচনের আশা রাখতেই পারে এই কমিশনের উপর। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সরকারের ইচ্ছা ব্যতীত তা আমরা বিগত ঢাকা সিটি, পৌর ও ইউনিয়ন নির্বাচনগুলোর দিকে তাকালেই ধারণা নিতে পারি। কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে প্রশাসনকে ৩৬৫ দিন সরকারের কথামত উঠবস করতে হয় সেই প্রশাসন কীভাবে একটি দিন নির্বাচন কমিশনের কথামত চলবে! যদিও সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা।
২. সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩ক অনুযায়ী ‘নির্বাচন কমিশন সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করিবেন। তবে ১২৩ এর ৩খ অনুযায়ী মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারনে সংসদ ভাঙ্গিয়া গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করিতে হবে। ১২৩ এর ৩ক অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হলে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই সেটি অনুষ্ঠিত হবে। যেখান বর্তমান সাংসদেরা সংসদ সদস্য থাকাকালীন অবস্থায় নির্বাচনে প্রতীদ্বন্দিতা করবেন যা নির্বাচনকে সুষ্ঠু হতে প্রভাবিত করিবে।
অনুচ্ছেদ ১২৩ এর ৩খ কে ঘিরেই আমাদের যত আশা ভরসা। সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের তিন মাস আগে প্রধানমন্ত্রী যদি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভাঙ্গিয়া দিবার পরামর্শ দিবেন ও রাষ্ট্রপতি সংসদ ভাঙ্গিয়া দিলে একটি নতুন পথ উন্মচিত হবে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলো ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কারণ সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়া পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালনে অযোগ্য হবেন না। এতে উভয় পক্ষেরই একটি ব্যালেস্ন থাকবে ও সংবিধানসম্মত ভাবে দেশে একটি সরকারও থাকবে। আর এই পদক্ষেপটি ক্ষমতাসীন দলকেই নিতে হবে। কারণ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরী করার দায়িত্ব তো ক্ষমতাসীন দলেরই। তবে বিরোধী দলগুলোর দায়িত্ব এ ক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগীতা করা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত না হয় তবে তা হবে ওয়ান ইলেভেনের মত আরেকটি ক্ষেত্র ও সন্ত্রাসবাদের অস্থিরতাকে উষ্কে দেওয়া। যা ক্ষমতাসীন দলের জন্যই সবচেয়ে বড় অভিশাপ হয়ে দাড়াবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন ও বিচার বিভাগ, সাউথইষ্ট ইউনিভার্সিটি

No comments

Powered by Blogger.