আর মাত্র দুটি জয় অসম্ভব কি!

বৃষ্টির ‘দুষ্টুমি’ আর টানা কয়েকটি একপেশে ম্যাচ মিলিয়ে কিছুটা ঢিমেতালেই শুরু হয়েছিল এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রুফি। ‘ছোট’ হয়ে ওঠার পর জমে উঠেছে ওয়ানডের দ্বিতীয় সেরা বৈশ্বিক আসর। আট সদস্যের সংসারে ভাঙনের জেরে এ টুর্নামেন্ট এখন চার দলের। এখান থেকে খসে যাবে আরও দুটি দল। এরপর রবিবাসরীয় শেষ মহারণ। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের যাবতীয় ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণ করে দুই হট ফেভারিট স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের সঙ্গে সেমিফাইনালে উঠে এসেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। ১ জুন বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে আট জাতির টুর্নামেন্টের পর্দা ওঠার দিনে সেমিফাইনালের এমন চেহারা ছিল অকল্পনীয়। শেষ চার দলের তিনটিই এশিয়ার! আরও নির্দিষ্ট করে বললে উপমহাদেশের। যেখানে এশিয়ার পতাকা বাংলাদেশের হাতেও।
পেসবান্ধব ইংলিশ কন্ডিশনে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের গ্রুপ থেকে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে দেখার আশা হয়তো কেউই করেননি। এটাই ক্রিকেটের সৌন্দর্য। যা অপ্রত্যাশিত, অকল্পনীয় তা-ই বাস্তব। সেমিফাইনালে সম্ভাব্য চার দলের মধ্যে এশিয়া থেকে শুধু বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের নামটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু উন্নতির গ্রাফ আরও উঁচুতে তুলে ধরে ইতিহাস গড়ার বিশ্বাসটা ঠিকই ছিল মাশরাফিদের মনে। সেই বিশ্বাসকে পারফরম্যান্সে অনূদিত করেই কার্ডিফে নিউজিল্যান্ড-বধের মহাকাব্য লিখে প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলছে বাংলাদেশ। আর এক ম্যাচ জিতলেই ফাইনাল। এরপর শিরোপার হাতছানি। জয়ের মধুর স্বপ্নে বিভোর টাইগারপ্রেমীরা। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার চ্যালেঞ্জটা অবশ্য বেশ কঠিন। কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। আগামীকাল এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে শেষ চারের অগ্নিপরীক্ষায় নামবে বাংলাদেশ। এর আগে আজ কার্ডিফে প্রথম সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। এশিয়া থেকে একটি দল যে ফাইনালে যাচ্ছে, সেটি নিশ্চিত। এমনকি অল-এশিয়া ফাইনালও হতে পারে। গ্রুপপর্বে সব সমীকরণ যেভাবে উল্টেপাল্টে গেছে, তাতে সেমিফাইনালেও দেখা যেতে পারে নতুন চমক, অঘটন। অঘটন যদি হয় মধুর, হোক না তা। ওয়ানডের সেরা আট দলের এই প্রতিযোগিতায় র্যাংকিংয়ের আট নম্বরে থাকা পাকিস্তান উঠে এসেছে শেষ চারে। এরচেয়ে বড় চমক আর কী হতে পারে! আর এক নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকা হতাশার চাদর গায়ে দিয়ে উঠেছে দেশে ফেরার বিমানে। বাংলাদেশ আবার বাড়ির পথ দেখিয়ে দিয়েছে গত বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে। বৃষ্টি-ভাগ্যে এবং নৈপুণ্যভাস্বর ক্রিকেটীয় সৌকর্যের ঐশ্বর্যে এই উত্তরণ।
সেমিফাইনালে কে কার মুখোমুখি হচ্ছে, সেটি জানতে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। টুর্নামেন্টের শুরুতে এমন চমকে ঠাসা জমাট প্রতিযোগিতার ছবি বোধহয় কেউ আঁকেননি। গ্রুপপর্বে যখন ফেভারিট-তত্ত্ব মাঠে মারা গেছে, সেমিফাইনালেও পাশার দান উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। ভারত যতই ফেভারিট হোক, বাংলাদেশের চোখ এখন ফাইনালে। বড় মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের সুখস্মৃতির পাশাপাশি শ্রীলংকার কাছ থেকেও প্রেরণা নিতে পারেন মাশরাফিরা। গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয়া শ্রীলংকা নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের ৩২১ রানের পাহাড় টপকে অনায়াসে জিতেছিল। খর্বশক্তির শ্রীলংকা যদি কোহলিদের মাটিতে নামাতে পারে, বাংলাদেশ না পারার কোনো কারণ নেই। এদিকে সেমিফাইনালের সব টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। যার সিংহভাগই ভারতীয় দর্শকদের মুঠোয় রয়েছে। তাতে সমস্যা নেই। ভারত গ্যালারিতে দাদাগিরি করুক আর বাংলাদেশ মাঠে! প্রথম সেমিফাইনালের ছবিটাও একইরকম। শতভাগ জয়ের রেকর্ড নিয়ে সেমিতে ওঠা একমাত্র দল ইংল্যান্ড পরিষ্কার ফেভারিট। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলংকাকে হারিয়ে পাকিস্তান বুঝিয়ে দিয়েছে, নিজেদের দিনে তাদের পক্ষে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

No comments

Powered by Blogger.