নির্দেশনা মানছে না ব্যাংকগুলো

গত মাসে ক্রেডিট কার্ডে সুদহার বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু কোনো ব্যাংক তা আমলে নিচ্ছে না। বিষয়টি কিছুতেই মানতে চাইছে না ব্যাংকগুলো। সার্কুলারটি পুনর্বিবেচনার দাবিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে ব্যাংক নির্বাহীদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)। একই দাবিতে চিঠি দিয়েছে ক্রেডিট কার্ড সেবার শীর্ষে থাকা দ্য সিটি ব্যাংকও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ভোক্তা ঋণের যে সুদহার রয়েছে, তার চেয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বেশি হতে পারবে এসব কার্ডের সুদহার। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে ভোক্তা ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ, ফলে ক্রেডিট কার্ডে নতুন সুদহার হবে সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ। এটি অবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বৃহস্পতিবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো গাইডলাইন বা সার্কুলার জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে কারও কোনো আপত্তি থাকলে সবকিছু পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন ব্যাংক সূত্র জানায়, বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডে ২৭ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ কাটা হয়। এ প্রসঙ্গে দ্য সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন যুগান্তরকে বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, নীতিমালাটি পুনর্বিবেচনার দাবিতে এবিবি এবং সিটি ব্যাংক দুটি চিঠি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠিয়েছে। চলতি সপ্তাহে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ১১ মে ক্রেডিট কার্ড সেবাসংক্রান্ত এক নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে দিয়েছে, শর্তগুলো অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। এর ফলে ক্রেডিট কার্ডের যেসব ব্যবহারকারী সুদহার নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন, তা কিছুটা কেটেছে। বর্তমানে দেশে ৯ লাখ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী রয়েছেন। তবে ব্যাংকগুলো এখনও এ নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি বলে জানা গেছে। এমনকি নীতিমালা নিয়ে আপত্তির কথাও জানিয়েছে। ক্রেডিট কার্ড সেবার শীর্ষে রয়েছে দ্য সিটি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক। এ ছাড়া মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক সেবাটি দিয়ে থাকে।
সূত্র জানায়, দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার। গত জানুয়ারি মাসেই গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৭৩৫ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন। ডিসেম্বরে ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকরা ৭০৫ কোটি টাকার লেনদেন করেন। গত জানুয়ারিতে প্রায় ৮ লাখ ৭৭ হাজার ক্রেডিট কার্ড চালু ছিল। এর মধ্যে দ্য সিটি ব্যাংকের ২ লাখ ৮ হাজার, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ১ লাখ ৫০ হাজার, ইস্টার্ন ব্যাংকের ১ লাখ ৫০ হাজার ও ব্র্যাক ব্যাংকের ১ লাখ ৩ হাজার। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাংক গ্রাহককে ক্রেডিট কার্ডের যে সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, তার ৫০ ভাগ নগদ উত্তোলন করতে পারবেন। কার্ডধারীদের আকৃষ্ট করতে ব্যবহারের ওপর কোনো ধরনের পুরস্কার, বোনাস, কুপন, টিকিটের অফার দেয়া যাবে না। একজন কার্ডধারীকে যে সৌজন্য বা অতিরিক্ত কার্ড দেয়া হয়, ওই কার্ড কোনো ধরনের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ পাবে না। ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে কোনো ধরনের ঋণখেলাপি হওয়া যাবে না, পাশাপাশি গ্রাহকের ই-টিআইএন থাকতে হবে। কার্ডে যে ঋণ হবে, তা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পরিশোধ না করলে গ্রাহক খেলাপি হয়ে পড়বেন। তার নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোতে (সিআইবি) প্রতিবেদন পাঠাতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে। সুদ হিসাবের পদ্ধতি, বকেয়া পরিশোধের শেষ সময়সীমা গ্রাহককে সুস্পষ্টভাবে অবহিত করতে হবে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী কাউকে ক্রেডিট কার্ড দেয়া যাবে না। তবে যদি কোনো শিক্ষার্থীর পড়ালেখা কার্ডের লেনদেনের ওপর নির্ভরশীল হয়, তাহলে ইস্যু করা যাবে। তা ছাড়া ক্রেডিট কার্ডে কোনো সংশোধনী আনতে হলে কার্যকরের ৩০ দিনের আগে গ্রাহককে অবহিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.