প্রকাশ্যে ঘুরছে আসামি : পলাতক দেখিয়ে চার্জশিট!

স্কুলছাত্র বাবুল শিকদার হৃদয় হত্যার প্রায় এক বছর পরও একমাত্র আসামি রায়হান ওরফে বিধানকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাকে পলাতক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিচ্ছে পুলিশ। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, রায়হান মিরপুরে কাউন্সিলর মামার গাড়িতে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়ায়। অনেক সময় মামার মিরপুরের ধানক্ষেত মোড়ের বাসায় রাতযাপনও করে। খোদ পুলিশ বলছে, ঘটনার পর ঘাতক রায়হান পলাতক থাকলেও মিরপুরে তার নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। তবে তাকে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশের এ বক্তব্যকে দায়সারা বলছেন বাবুলের বাবা মোস্তফা শিকদার। তার দাবি, আসামির মামা মিরপুরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন তিতু। প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হওয়ায় রায়হানকে ধরতে পুলিশের কোনো আগ্রহ নেই। সে এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না- এমন বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। গত বছরের ১১ মে মিরপুরের জনতা হাউজিংয়ের ধানক্ষেত মোড় এলাকায় বাবুলকে হত্যা করা হয়। ক্রিকেট খেলার দ্বন্দ্বে রায়হান তাকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দুই ঘণ্টা আগে বাবুল খুন হয়। পরে পরীক্ষার ফলাফলে সে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। বাবুল মিরপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাজ্জাদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘আসামি এখনও পলাতক। মাঝে মধ্যে মিরপুরে আসে সে। তবে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আমরা আসামিকে পলাতক দেখিয়ে শিগগিরই চার্জশিট দেব।’ মামলার বাদী বাবুলের বাবা মোস্তফা শিকদার যুগান্তরকে বলেন, ঘাতক রায়হানকে ধরতে পুলিশের কোনো আগ্রহ নেই। কাউন্সিলরের ভাগ্নে বলেই হয়ত তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আমরা বিভিন্ন সূত্রে তথ্য পাই, মিরপুরে রায়হান নিয়মিত আসে। পুলিশও সেটা জানে। তারপরও বলছে, আসামিকে তারা খুঁজে পায় না। তিনি বলেন, পুলিশের অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে আমি দেখা করেছি। সবাই আমাকে আশ্বস্ত করেছেন খুনিকে ধরা হবে। কিন্তু এক বছর পরও তারা আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, রায়হানের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের ভাণ্ডারীকান্দিতে তাকে প্রায়ই দেখা যায়। এমনকি মিরপুরের ধানক্ষেত মোড় এলাকায় তার মামা কাউন্সিলর তিতুর বাসায় সে নিয়মিত যাতায়াত করে। মামার গাড়িতে এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। অথচ পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না।
রায়হান নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে পুলিশের মিরপুর বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আসামিপক্ষ বাদীর সঙ্গে সমঝোতার জন্য একসময় চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এখানে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই। আসামি গ্রেফতারে এখনও চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর মডেল থানার ওসি নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বাবুল হত্যার একমাত্র আসামি রায়হান এখনও পলাতক। তাকে ধরতে চেষ্টা চলছে। দুরন্ত কিশোরের নির্মম পরিণতি : দুরন্ত কিশোর ছিল বাবুল শিকদার। বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত মিরপুর-১ নম্বর এলাকায়। ছেলেকে নিয়ে মোটর মেকানিক বাবা মোস্তফা শিকদারের অনেক স্বপ্ন ছিল। সময় পেলেই বাবুল বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠত খেলাধুলায়। ২০১৬ সালের ১১ মে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার কথা। বাবুল সকালে মাকে বলেছিল, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। এরপর মিরপুরের ধানক্ষেত এলাকায় ক্রিকেট খেলায় মেতে উঠেছিল সে। খেলার সময় একটি নো বলকে কেন্দ্র করে রায়হানের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। দুই ঘণ্টা পর পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে- এ যুক্তিতে বাবুল তখন খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় রায়হান ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে বাবুলের মাথায় আঘাত করে। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। সেদিন দুপুরে এসএসসি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, বাবুল জিপিএ-৫ পেয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.