বেশি দামে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সিদ্ধান্ত

শেষ পর্যন্ত সরকার বেশি দামে ভারত থেকে বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ইউনিটপ্রতি ২৯ পয়সা বেশি দরে বিদ্যুৎ কেনা হবে আদানি পাওয়ার লিমিটেড থেকে। প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৮৯ পয়সা দরে পর্যায়ক্রমে ১৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে ২৫ বছরে সরকারের ব্যয় হবে ১ লাখ ৯০ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। আর বিদ্যুৎ কিনতে হবে ডলারে। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ বৃদ্ধিসহ দেশের আর্থিক খাতে নানামুখী ক্ষতি বয়ে আনবে। তা সত্ত্বেও বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎ কেনা ছাড়াও আরও ৪টি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। কমিটির আহ্বায়ক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের বাইরে থাকায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এ সময় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, কয়লাভিত্তিক দেশীয় বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘এস আলম পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেড’-এর মূল্য থেকে প্রতি ইউনিট ২৯ পয়সা বেশিতে আমদানি করা হচ্ছে এ বিদ্যুৎ। শুধু এস আলম প্রতিষ্ঠান নয়, এ রকম আরও বেশ কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সক্ষম উদ্যোক্তা কম মূল্যে বিদ্যুৎ দেয়ার প্রস্তাব নিয়ে বসে আছেন। অথচ দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাশ কাটিয়ে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এদিকে বেশি মূল্যে বিদ্যুৎ আমদানি প্রসঙ্গে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে পাঠানো প্রস্তাবে বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, কয়েকটি অতিরিক্ত আইটেমে বাড়তি ব্যয় হবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানে, যা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এর মধ্যে রয়েছে ৯০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, কর্পোরেট ট্যাক্স ও অক্সিলিয়ারি কনজামশনের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি। সেখানে আরও বলা হয়, আদানি পাওয়ারের প্রাথমিক প্রস্তাবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ৭ টাকা ৫৩ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এটি কমিয়ে ৬ টাকা ৮৯ পয়সা করা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বিদ্যুৎ কেনার প্রস্তাবটি সভায় অনুমোদিত হয়েছে। প্রতি ইউনিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ দশমিক ৬১ সেন্ট, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ টাকা ৮৯ পয়সা। সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় পাঠানো প্রস্তাবনায় বলা হয়, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে ২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। এর আওতায় ভারত থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট ‘আদানি পাওয়ার লিমিটেড’-এর সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
এ ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে আদানি পাওয়ার গত বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি একটি সমন্বিত কারিগরি ও বাণিজ্যিক প্রস্তাব দাখিল করে। প্রস্তাবটি বিভিন্ন কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাই এবং আদানি পাওয়ারের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের পর বিদ্যুৎ বিভাগ এটি অনুমোদন দেয়। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ডে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রাদেশিক সরকার, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর অনাপত্তিপত্র সংগ্রহের দায়িত্বও আদানি পাওয়ারের। ইতিমধ্যেই ভারত সরকার প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শর্তসাপেক্ষে বিদ্যুৎ সরবরাহের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে সে দেশের কোনো আইনগত পরিবর্তন বা রাজনৈতিক ঘটনার কারণে বিদ্যুৎ বিভাগকে যাতে বাড়তি ব্যয় বহন করতে না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও নিশ্চয়তা দিতে ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে কর ও শুল্ক ছাড় দেয়ার জন্য ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রকল্পের আওতায় ঝাড়খন্ড থেকে বাংলাদেশের সীমানা পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বগুড়া পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কথা রয়েছে বলে জানায় বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা ১০ থেকে ১৪ শতাংশ হারে বাড়ছে। সে হিসাবে ২০২১ সালে দেশে দৈনিক ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে।

No comments

Powered by Blogger.