হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তি

সারা দেশে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে হঠাৎ করেই ধর্মঘট শুরু করেছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। সকাল ছয়টা থেকে কর্মবিরতির নামে এ ধর্মঘট শুরু হয়। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ বিভিন্ন মালামাল ও যাত্রী পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে দূরপাল্লার যাত্রীসহ স্থানীয় যাত্রীরাও দুর্ভোগে পড়েন। ঢাকার সাভারে ট্রাক চাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে সোমবার এক চালকের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
এর প্রতিবাদে গতকাল সকাল থেকে এ ধর্মঘট চালু হয়। মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়ার প্রতিবাদে রোববার থেকে শুরু করে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট চালান শ্রমিকেরা। এর মধ্যেই গতকাল থেকে পরিবহনশ্রমিকেরা আবার নতুন কর্মসূচি শুরু করেছেন। নতুন করে আবার দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর: গতকাল সকালে ও দুপুরে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা যায়। শহরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে বেশি ভাড়া দিয়ে অনেককে ইজিবাইকে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। এদিকে পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধ থাকায় খুলনার সোনাডাঙ্গার কেসিসি পাইকারি কাঁচাবাজারে পণ্য আসে অর্ধেকের কম। ওই বাজার থেকে কাঁচামাল সরবরাহ করা হয়নি দেশের অন্য কোনো জায়গায়। প্রতিদিন বাজারটি থেকে ৫০টির বেশি ট্রাক পণ্য নিয়ে দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যায়। এর বড় প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। কেসিসি পাইকারি কাঁচাবাজারের আব্দুস সোবহান নামের এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী গতকাল দুপুরে বলেন, ‘এখান থেকে কাঁচামাল কিনে বিভিন্ন জেলায় ট্রাকে করে পাঠাই। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘট থাকায় মাল কিনতে পারিনি। বাজারেও মাল অনেক কম আসে। এভাবে চললে ব্যবসায় বড় ধরনের ক্ষতি হবে।’ বাজার সমিতির সভাপতি শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, এ বাজার থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৫৫ ট্রাক কাঁচামাল দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়।
পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় বিভিন্ন স্থান থেকে বাজারে কাঁচামাল আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আশপাশের এলাকা থেকে কিছু কাঁচামাল নছিমন-করিমনে আসছে। তবে ৮০ শতাংশ মালামাল আসছে না। বিকেলে কেসিসি বাজারের ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘সরবরাহ একেবারে কম। চাহিদামতো মাল কিনতে পারছি না। তাই সবজি বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বেঁচতে হচ্ছে বেশি দামে।’ বরিশাল নগরের প্রধান বাস নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরে শত শত যাত্রী আটকা পড়েছেন। নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে বরিশালে এসেছেন রুহিনী কুমার রায়। চিকিৎসার জন্য এক আত্মীয়কে নিয়ে বেনাপোল হয়ে ভারতে যাবেন তিনি। কিন্তু এসে শুনতে পান বাস ধর্মঘটের কথা। এখন কোথায় যাবেন, কী করবেন কিছুই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না তিনি। একইভাবে অপেক্ষা করছেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার সবিতা রানীসহ আরও অনেকে। শুধু বাস নয়; বন্ধ রয়েছে মাইক্রোবাস চলাচলও। মাইক্রোবাস চালক মিজান বলেন, ভুরাঘাটা, মস্তফাপুর ও মাদারীপুরে বাসশ্রমিকেরা তাঁদের মাইক্রোবাস চালকদের পিটিয়ে আহত করেছেন। এ জন্য সকাল থেকেই মাইক্রোবাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন তাঁরা। নগরের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডেও শত শত যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। খাইরুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, সকালে বরগুনার আমতলী যাওয়ার জন্য এখানে এসে শোনেন বাস ধর্মঘটের কথা। রূপাতলী থেকে সকাল ১০টার পর অভ্যন্তরীণ রুটেও বাস চলাচল বন্ধ করে দেন বাসশ্রমিক ও মালিকেরা। সকাল থেকেই বরগুনা থেকে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ পথে বাস চলাচল বন্ধ অাছে। পরিবহনের টিকিট কাউন্টারগুলো বন্ধ ছিল।
বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া পীরের বার্ষিক মাহফিলে অংশ নিতে আসা কয়েক হাজার মুসল্লি দুর্ভোগে পড়েন। সাধারণ যাত্রীরাও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। দুপুরে বরগুনা বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন সাফিয়া বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেতাগীতে অসুস্থ ভাইকে দেখতে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছি। স্ট্যান্ডে এসে শুনি বাস চলাচল বন্ধ। এখন ব্যাগ আর দুই বাচ্চাকে নিয়ে বিপদে পড়েছি।’ জেলায় ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলো। ভোর ছয়টা থেকেই ধর্মঘট শুরু হয়। এতে মাদারীপুরের সব উপজেলায় বাস, ট্রাকসহ সকল চার চাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আকস্মিক ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। বাসস্ট্যান্ডগুলোতে বাস না পেয়ে অনেকেই রিকশা, ইজিবাইক বা বিকল্প যানবাহনে করে গন্তব্যস্থলে যান। এ সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায় করেন রিকশা ও ইজিবাইকের চালকেরা। রফিকুল নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী বলে, ‘পরীক্ষা দিতে যাব; কিন্তু কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়া খুব জরুরি।’ ধর্মঘটের কারণে জেলার কৃষক ও সবজি ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। গতকাল মেহেরপুর-কুষ্টিয়া, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কে আন্তজেলা ও দূরপাল্লার কোনো যান ছেড়ে যায়নি। মেহেরপুর শহরের আলুচাষি হারুন উর রশিদ বলেন, ধর্মঘটের কারণে আলু তোলার পর জমিতেই রাখতে হয়েছে। সেগুলো হিমাগারে পাঠানো যাচ্ছে না। মেহেরপুর কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু হানিফ বলেন, মেহেরপুর থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের সবজি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.