সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি, কমছে সহায়তা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম বাজেট প্রস্তাবে সামরিক খাতে ব্যয় বরাদ্দ এক লাফে ১০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। ডলারের অঙ্কে শুধু এই বৃদ্ধিরই পরিমাণ ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। বিভিন্ন সরকারি খাতের ব্যয় বরাদ্দ হ্রাসের মাধ্যমে এই অতিরিক্ত অর্থের জোগান দেওয়া হবে। সোমবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প নিজেই এই অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেন। ঠিক কোন কোন খাতে কী পরিমাণ ব্যয় হ্রাস পাবে, সে কথা ট্রাম্প জানাননি। গতকাল মঙ্গলবার কংগ্রেসের উভয় কক্ষের এক যৌথ অধিবেশনে এ বিষয়ে তাঁর বিস্তারিত জানানোর কথা ছিল। মার্চের মাঝামাঝি ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসে বাজেট প্রস্তাব পেশ করবেন বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই ট্রাম্প দেশের সামরিক শক্তি বহুলাংশে বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র ভান্ডার বৃদ্ধিরও প্রস্তাব করেছেন। সোমবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ধ্বংসপ্রাপ্ত’ সামরিক শক্তিকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি সামরিক খাতে অভূতপূর্ব ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন।
সে বাজেটের ভিত্তি হবে নাগরিক নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তা। বাজেট ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, ফেডারেল সরকারের অধিকাংশ বিভাগে বাজেট বরাদ্দ হ্রাসের মাধ্যমে সামরিক খাতে অতিরিক্ত অর্থসংস্থান করা হবে। উল্লেখ্য, সোমবারই প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ম্যাটিস জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) মাত্র ১০ মাসে নিশ্চিহ্ন করার একটি পরিকল্পনা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পেশ করেছেন। জানা গেছে, এতে ইরাক ও সিরিয়ায় অতিরিক্ত পদাতিক সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন বাজেট প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাবে। মার্কিন বৈদেশিক সাহায্যের পুরো বরাদ্দই পররাষ্ট্র দপ্তরের বাজেটের অংশ। ২০১৬ সালের হিসাবে বৈদেশিক সাহায্যসহ এ দপ্তরের মোট ব্যয় বরাদ্দ ছিল প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। ভাবা হচ্ছে, ট্রাম্পের প্রস্তাব কংগ্রেসে গৃহীত হলে পররাষ্ট্র দপ্তরের বাজেট প্রায় ৩০ শতাংশ কাটছাঁট হতে পারে। রিপাবলিকান নেতারা দীর্ঘদিন থেকেই বৈদেশিক সাহায্য খাতে বড় রকমের কাটছাঁটের দাবি করে আসছেন। ওবামা প্রশাসন ২০১৭ সালের জন্য ৪ দশমিক ১৫ ট্রিলিয়ন ডলারের যে বাজেট প্রস্তাব করে, তাতে বৈদেশিক সাহায্য খাতে মোট ব্যয় বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ২৪০ কোটি ডলার। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারই রাখা হয়েছে সামরিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা খাতে। এই সামরিক সাহায্যের সিংহ ভাগ চলে যায় আফগানিস্তান, ইসরায়েল, মিসর ও পাকিস্তানের জন্য।
জাতিসংঘ ও এর অঙ্গ সংস্থাগুলোর জন্য যে চাঁদা যুক্তরাষ্ট্র দেয়, তাও আসে পররাষ্ট্র দপ্তরের খাত থেকে। জাতিসংঘের সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, মার্কিন সাহায্য হ্রাস পেলে শান্তিরক্ষা, উদ্বাস্তুদের দেখভাল ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মতো খাতগুলো বড় রকমের সংকটে পড়বে। বৈদেশিক সাহায্য খাতে বরাদ্দ হ্রাস পেলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ মার্কিন অর্থনৈতিক সাহায্য থেকে বঞ্চিত হতে পারে। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ তেমন উল্লেখযোগ্য নয়, কারণ বাংলাদেশের জন্য মার্কিন অর্থনৈতিক সাহায্য কমতে কমতে ২০১৬ সালে মাত্র ১১ কোটি ৪০ লাখ ডলারে ঠেকেছে। জর্জ বুশ ও ওবামা প্রশাসন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে জঙ্গিবাদ ঠেকানো ও গণতন্ত্র প্রসার তাদের পররাষ্ট্রনীতির একটি প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। ট্রাম্পের বাজেট প্রস্তাব থেকে স্পষ্ট, তিনি সে পথ থেকে সরে এসে সামরিক বাহিনীর ওপর অধিক নির্ভরশীল হতে চাইছেন। এই সম্ভাবনায় আতঙ্কিত কংগ্রেসের ডেমোক্রেটিক সদস্য ও সাবেক কূটনীতিকেরা। ১২০ জন সাবেক জেনারেল ও অ্যাডমিরালসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা সোমবার প্রকাশিত এক পত্রে উভয় দলের কংগ্রেস সদস্যদের কাছে আবেদন করেছেন বৈদেশিক সাহায্য ও পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যয় বরাদ্দ যেন কোনোক্রমেই হ্রাস না করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.