হরতালকারীদের ওপর পুলিশের হামলায় আহত ২৫

গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে ডাকা হরতালের সমর্থনে বের করা মিছিলে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে কয়েকটি বাম ছাত্রসংগঠনের কর্মীদের ওপর জলকামান থেকে পানি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। প্রগতিশীল ছাত্রজোটের হিসাবে, পুলিশের ওই হামলায় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ ১৬ জন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। অবশ্য পুলিশ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে কয়েকটি বাম দল গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় হরতাল পালন করে। হরতাল শেষে নতুন কর্মসূচি হিসেবে ১৫ মার্চ জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এই কর্মসূচির সমর্থনে আজ থেকে ১৪ মার্চ প্রচারাভিযান চালানো হবে। হরতালের পাশাপাশি গতকাল থেকে শুরু হওয়া পরিবহনশ্রমিকদের ধর্মঘটে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। সড়কগুলোতে বাস ছিল একেবারেই কম। সকাল সাতটায় হরতালের সমর্থনে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর জোট প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ৭০ থেকে ৮০ জন নেতা-কর্মী শাহবাগ চত্বরে জড়ো হন। তাঁরা আশপাশের সড়কে মিছিল করেন। এরপর শাহবাগ চত্বরে গিয়ে সমাবেশ করেন। সকাল ১০টা পর্যন্ত সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পুলিশ হঠাৎ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান থেকে পানি ছুড়তে থাকে। এতে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুলিশ ছাত্রদের লাঠিপেটা করে। পুলিশের দফায় দফায় হামলায় শাহবাগ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ফলে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় আহত কয়েকজন ছাত্রকে আটক করে পুলিশ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্ররা আবারও জড়ো হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে সমাবেশ করেন। শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পুলিশের ওপর ঢিল ছোড়া ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে।
তাঁদের মধ্যে একজন নারী। প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতারা বলছেন, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেতা। তাঁদের মধ্যে দুজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন নাসিরউদ্দিন ও ভজন। আহত ব্যক্তিদের আশপাশের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর আগে সকাল আটটায় শাহবাগ মোড়ে টায়ার জ্বেলে ও ইট রেখে সড়ক অবরোধ করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও হরতালকারীরা। এ সময় সংগঠনের নেতারা গ্যাসের দাম কমাতে সরকারের প্রতি দাবি জানান। না কমালে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দেন। হরতালের সমর্থনে বাম দলগুলোর নেতা-কর্মীরা রাজধানীর শাহবাগ, পল্টন ও মিরপুরে মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। পুরানা পল্টনে সিপিবি কার্যালয়ের সামনের রাস্তার একাংশ অবরোধ করে রাখেন হরতালকারীরা। পরে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। হরতালকারীদের অভিযোগ, মিরপুর এক নম্বরে মিছিলে পুলিশ বাধা দিয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল হয়েছে। গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকার অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদে হরতাল ডেকেছি।’ হরতাল সফল হয়েছে উল্লেখ করে রাজধানীবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাম দলগুলোর নেতারা। তাঁরা আগামী দিনের কর্মসূচিতে একইভাবে সমর্থন দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। হরতাল আহ্বানকারী বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা ও গণসংহতি আন্দোলন আলাদা বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছে। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা হরতালকে ‘যৌক্তিক’ উল্লেখ করে তাতে পুলিশের হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যে গণশুনানি ডেকেছিল তাতে মূল্যবৃদ্ধির বিপক্ষে বেশি মত এসেছিল। কিন্তু সরকার এর বিরুদ্ধে গিয়ে অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.