সাড়ে ১১ ঘণ্টা পর উদ্ধার ‘আলী বাহাদুর’

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নতুন পাড়া এলাকার মরা পদ্মা নদীর খালের পানিতে গতকাল সোমবার সকাল আটটার দিকে গোসল করাতে নিয়ে গেলে বালুর চরে আটকে যায় হাতি ‘আলী বাহাদুর’। অবশেষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল হাতিটি উদ্ধার করে। দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, হাতিটি দেখতে আশপাশে উৎসুক মানুষের ভিড় পড়ে আছে। এ সময় হাতির মাহুতসহ স্থানীয় লোকজনকে হাতিটি উদ্ধার করতে ব্যস্ত দেখা যায়। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করেও উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং ধীরে ধীরে হাতির পা দুটো বালুর চরে আটকে যাচ্ছে। হাতির মাহুত মো. শান্ত আলী বলেন, তাঁরা ফরিদপুরের টেকেরহাটের ‘কমলা সার্কাস’ অনুষ্ঠানে এসেছেন। রোববার সকালে হাতিটি নিয়ে টেকেরহাট থেকে তাঁরা বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে খোরাক জোগাতে টাকা তুলেছেন। তিনিসহ সহকর্মী মো. বাবুকে সঙ্গে করে রোববার বিকেলে গোয়ালন্দে এসে পৌঁছান। রাতে গোয়ালন্দে থাকার পর গতকাল সকাল আটটার দিকে উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নতুন পাড়া এলাকায় যান। সেখানকার মরা পদ্মা নদীর একটি শুকনা খালের অল্প পানিতে হাতিটিকে গোসল করাতে নামানো হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে হাতিটির ডান পাশের পা দুটি বালুতে আটকা পড়ে। যতই নড়াচড়া বেশি করে, ততই পা দুটি দেবে যায়। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা চান মাহুত। স্থানীয় লোকজন প্লাস্টিকের পাইপ ও বাঁশ দিয়ে হাতিটির পায়ের নিচ থেকে বালু সরিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করেও সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ব্যর্থ হন। হাতির মালিক রবিউল ইসলামকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। উদ্ধারকাজে ব্যস্ত স্থানীয় আবদুল আউয়াল বলেন, সকাল থেকে তাঁরা দুই দফায় চার-পাঁচজন করে হাতিটি উদ্ধারে কাজ করছেন। কিন্তু বেলা গড়িয়ে গেলেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এখন বিকল্প উপায় ছাড়া কোনোভাবেই হাতিটি উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। গোয়ালন্দ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বরুণ কুমার দত্ত ঘটনাস্থল ঘুরে এসে বলেন, ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টায় সহজে হাতি অসুস্থ হবে না। তবে দ্রুত এটি উদ্ধার করা দরকার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের হাতি উদ্ধারে করণীয় সম্পর্কে তাদের কিছুই করার নেই। এমনকি এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো তাদের কোনো সরঞ্জামাদি নেই। জেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগ বা বন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গণেশ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো তাঁদের কোনো ব্যবস্থা নেই। দ্রুত হাতিটি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এ ক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের থেকে সহযোগিতা দেওয়া হবে। তবে হাতিটি উদ্ধারে তিনি রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দেন। গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হাসান হাবীব বলেন, বিষয়টি জেলা প্রাণিসম্পদ, বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য বিভাগকে জানানো হয়েছে। এ মুহূর্তে হাতিটি উদ্ধারে খালের পানিনিষ্কাশনে সেখানে শ্যালো ইঞ্জিন বসানো হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত হাতিটি উদ্ধার করা সম্ভব হবে। জেলা বন কর্মকর্তা আজাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘এ ধরনের সংবাদ আমার জানা নেই। এ ছাড়া আমাদের জনবল খুবই কম। মাত্র দুজন লোক দিয়ে চলে বন বিভাগের কার্যক্রম। এ ক্ষেত্রে আমাদের করার কিছুই নেই।’ সর্বশেষ রাত সাড়ে সাতটার দিকে হাতিটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.