বছরে ১৪৪ একর জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

ভোলায় প্রায় ৩৫০ একর কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে ৮৫টি ইটভাটা; দিনে দিনে বাড়ছে পরিধি। এসব ভাটায় প্রতিবছর প্রায় ১৪৪ একর কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বরতা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রশান্ত কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, আবাদি জমির মাটি দিয়ে ভাটার চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে ফসলের উৎপাদন।
ইটভাটায় জমির উর্বর অংশের মাটির ব্যবহার বন্ধ করা না হলে এ অঞ্চলে কৃষি বিপর্যয় ঘটতে পারে। ভাটা নির্মাণে কৃষি বিভাগের ছাড়পত্র দরকার হলেও ভোলায় কেউ ছাড়পত্র নেয়নি। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩-এ উল্লেখ আছে, ইটভাটায় ফসলি জমির ওপরের মাটি ব্যবহার করলে প্রথমবারের জন্য ২ বছরের কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধের শাস্তি ২ থেকে ১০ বছরের জেল এবং ২ থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা। একই আইনে ফসলি জমি, জনবসতিপূর্ণ এলাকা, সংরক্ষিত এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, বনভূমি, জলাভূমি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করলে শাস্তির বিধান রয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ভোলায় ৮৫টি ইটভাটা রয়েছে। একেকটি ইটভাটার দখলে রয়েছে ২ একর থেকে ১২ একর জমি। ৮৫টি ভাটায় স্থায়ী জমি রয়েছে ৩৫০ একর। প্রতিবছরই ভাটাগুলো আশপাশের জমি কিনে তাদের পরিধি বাড়াচ্ছে। গত ২০ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরেজমিনে অন্তত ২০টি ইটভাটায় গিয়েছেন এ প্রতিবেদক। এ সময় দেখা যায়, সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশায় পাঙাশিয়ার ফাইভ স্টার ব্রিকস, তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের সাঈদ ব্রিকস, শম্ভুপুরের সাকিব ব্রিকস, তুলি ব্রিকস, লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদের সোনালী ব্রিকস, ফরাজগঞ্জের নবনী ব্রিকস এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলার ওএম ব্রিকস ঘিরে রয়েছে ফসলি জমি। ভাটার জমিতেও আগে চাষাবাদ হতো বলে জানান স্থানীয় ব্যক্তিরা। একইভাবে চরফ্যাশন উপজেলার চর মানিকা সংরক্ষিত বনের পাশে কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে আকন ও রাত্রি ব্রিকস। এসব ভাটার আশপাশে রয়েছে জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভোলা কার্যালয় থেকে জানা গেছে, জেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ১ লাখ ৯২ হাজার ৬৮২ হেক্টর। এক ফসলি জমির পরিমাণ ৫৪ হাজার ২২ হেক্টর। পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন,
কেবল একফসলি জমিই ইটভাটার জন্য উপযুক্ত। আর নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ভাটার আওতায় একফসলি দুই একরের বেশি জমি রাখা যাবে না। প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে ১৪৪ একর জমি ৩০ জন মাটি বিক্রেতা ও ইট বানানোর কারিগরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোলার মাটি বেশির ভাগ বেলে ও দোআঁশ। ভোলায় এক মৌসুমে একটি ভাটায় ইট বানানো হয় গড়ে ৭০ লাখ। সে হিসাবে ৮৫টি ভাটায় ৫৭ কোটি ৪০ লাখ ইট উৎপাদন হচ্ছে। এই পরিমাণ ইট বানাতে প্রতিবছর ১৪৩ দশমিক ৫ একর জমি নষ্ট হচ্ছে। অনুমোদন আছে ২৪টির পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, ভোলার ৮৫টি ইটভাটার মধ্যে ৫১টি আধুনিক প্রযুক্তির (জিগজ্যাগ)। তবে বর্তমানে মাত্র ২৪টি ভাটার অনুমোদন আছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ ইটভাটায় প্রায়ই অভিযান চালানো হচ্ছে। অনেক ইটভাটা ভেঙেও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পরে তারা আবার চুরি করে ইট উৎপাদন করে। জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেন, সভ্যতা ও উন্নয়নের জন্য ইট লাগবেই। বিকল্প ইট, পরিবেশসম্মত ইট তৈরির পথ দেখানো উচিত পরিবেশবাদীদের। মোদ্দাকথা হলো, ইট তৈরিতে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম মানতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.