দেয়াল: অভিবাসী সমস্যার ‘সস্তা সমাধান’

অভিবাসী, চোরাকারবারি বা শত্রু গোষ্ঠী—যে-ই হোক, তাদের হুমকি থেকে রক্ষায় বিশ্বায়নের এ যুগেও অনেক সমাজে সীমান্ত দেয়াল নির্মাণ এক তাৎক্ষণিক ও সস্তা সমাধান হয়ে উঠেছে। কিন্তু তা কোনো কার্যকর বা টেকসই সমাধান নয়। এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ১৯৮৯ সালে জার্মানিকে বিভক্তকারী ঐতিহাসিক বার্লিন দেয়ালের পতনের সময় বিশ্বে এ রকম সীমান্ত দেয়ালের সংখ্যা ছিল ১১।
এরপর বিশ্বায়নের গতি যেমন বেড়েছে, তেমন বেড়েছে বিভক্তির দেয়ালও। ১১টি দেয়াল এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০টিতে। মন্ট্রিলের কুইবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবজারভেটরি অব জিয়োপলিটিকসের পরিচালক এলিজাবেথ ভ্যালেট বলছেন, এভাবে দেশে দেশে সীমান্ত দেয়াল বাড়ার পেছনে কাজ করেছে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা এবং ২০১১ সালের কথিত আরব বসন্তের কারণে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ। এসব দেয়ালের এক-তৃতীয়াংশ তৈরি করা হয়েছে কোনো দ্বন্দ্ব মেটাতে। যেমন: উত্তর ও দক্ষিণ সাইপ্রাস, দুই কোরিয়া এবং ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তের দেয়াল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আরও তিন ধরনের দেয়াল তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে। এগুলো অভিবাসী, চোরাচালানি ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী দেয়াল। ভ্যালেট বলেন, অভিবাসীর চাপে যখন কোনো সমাজের পরিচিতি পরিবর্তন বা অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টির মতো হুমকি তৈরি হয়, তখন প্রায়ই সীমান্ত দেয়াল বা বেড়া নির্মাণকে সহজলভ্য জবাব হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যায়। এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ মেক্সিকোর সঙ্গে সীমান্ত দেয়াল নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগ। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া উপাত্তের বরাত দিয়ে ভ্যালেট বলেন, দেয়াল অভিবাসীদের আগমনে বাধা দেয়; তাঁদের আসার গতিও মন্থর করে; কিন্তু কখনো তাঁদের বাইরে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। তিনি বলেন, এদিকে অভিবাসীদের এ উদ্যোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা যেহেতু সীমিত,
তাই তাঁদের মধ্যে হতাশাবোধ থাকে প্রবল। আর এ হতাশাই তাঁদের নবজাতককে কোলে আগলে হলেও বিপৎসংকুল পথে জীবনঝুঁকি নিয়ে ভিন দেশে পাড়ি জমাতে প্ররোচিত করে। অভিবাসী ঠেকাতে দেয়াল নির্মাণকে বেশ ব্যয়বহুল পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, দেয়াল নির্মাণের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় না করে বরং তা অভিবাসী সমস্যার কারণ সমাধানে খরচ করলে এর সদ্ব্যবহার হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির হিসাব অনুযায়ী, মেক্সিকো সীমান্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দেয়াল নির্মাণের ঘোষণা বাস্তবায়নের ব্যয় ২ হাজার ১৬০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.