আলোচনায় সেই আম্পায়ারিং

বৃষ্টির আশঙ্কায় প্রিমিয়ার লিগে এবার রিজার্ভ ডে থাকছে। তবে বিসিবির গ্রাউন্ডস ম্যানেজার সৈয়দ আবদুল বাতেন দারুণ আত্মবিশ্বাসী, টানা বৃষ্টি না হলে রিজার্ভ ডেতে খেলা যাবেই না। লিগের তিন ভেন্যু মিরপুর, ফতুল্লা ও বিকেএসপির মাঠের পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা অত্যাধুনিক। দুই-তিন ঘণ্টা বৃষ্টি হলেও কর্তিত ওভারের ম্যাচে দিনের খেলা দিনেই শেষ করে ফেলতে সমস্যা হবে বলে মনে করেন না তিনি। উইকেট নিয়েও আবদুল বাতেন দারুণ রোমাঞ্চিত, ‘কাটা ঘাস নয়, এবার জীবিত ঘাস থাকবে। পুরো স্পোর্টিং উইকেট দেখবেন এবার।’ কাল থেকে শুরু প্রিমিয়ার লিগের জন্য সুখবরই বলতে হবে এটিকে। কিন্তু শুধু স্পোর্টিং উইকেট দিয়েই তো আর প্রিমিয়ার লিগের আবহ সুস্থ রাখা যাবে না, প্রয়োজন সবার ‘স্পোর্টিং’ মানসিকতাও। সেটা থাকবে তো? বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা থেকেই উঠছে প্রশ্নটা। আর এই প্রশ্নের কেন্দ্রে আম্পায়ারিং। বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের কারণে কয়েক বছর ধরেই প্রশ্নবিদ্ধ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ। আম্পায়ার মনোনয়ন নিয়েও বিতর্ক-সমালোচনা হয়েছে অনেক। বিসিবি সভাপতিসহ বোর্ড পরিচালকদের ভারে ভারী আবাহনীর ম্যাচগুলোতে ঘুরেফিরে মুখচেনা বিতর্কিত আম্পায়ারদের দেখা যাওয়াই এর বড় কারণ। বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান অবশ্য গত ১০ এপ্রিল ‘প্লেয়ার ড্রাফট’ শেষে এই অভিযোগ খণ্ডন করার চেষ্টা করে বলেছেন, গত দুই মৌসুমে লিগের ফলাফল দেখে মোটেই মনে হয় না যে আবাহনী-সংশ্লিষ্ট পরিচালকেরা প্রভাব বিস্তার করছেন। শঙ্কা তবু এবারও থাকছে এবং তার অন্যতম কারণ চলমান তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট ও আগেই শেষ হয়ে যাওয়া দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে বিতর্কিত আম্পায়ারিং। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ খুব বেশি না হলেও জানা গেছে, তৃতীয় বিভাগে বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ভুক্তভোগী ক্লাবগুলোর ফোন পাচ্ছেন সিসিডিএম-প্রধান গাজী গোলাম মোর্তজা। এ নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধও তিনি। তবে কাল মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের প্রসঙ্গ অবশ্য এড়িয়ে গেলেন। শুধু বললেন, ‘প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ নামী আম্পায়ারদেরই করা উচিত। এটা দেশের প্রধান লিগ। আশা করি, যাঁদের নিয়ে সমালোচনা নেই, তাঁদের দিয়েই লিগ চালানো হবে।’ আম্পায়ারিং নিয়ে সিসিডিএম-প্রধানের অবশ্য প্রত্যাশা ছাড়া আর কিছু করারও নেই। লিগে কারা আম্পায়ারিং করবেন, কে কোন ম্যাচে দায়িত্ব পাবেন, সেসব ঠিক করে বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটি। বিতর্কিত ঘটনায় সিসিডিএমের কাজ শুধু ক্লাবগুলোর অভিযোগ আম্পায়ার্স কমিটির কাছে পাঠানো। তবে আম্পায়ার্স কমিটিও যে খুব স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তা নয়। বড় ক্লাবের চাপ সেখানে বিষম বাধা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক কর্মকর্তা তবু আশার কথা শোনালেন, ‘প্রিমিয়ার লিগে এবার আগের মতো অত খারাপ আম্পায়ারিং হবে না। নিশ্চিত থাকুন।’ তাঁর এই আত্মবিশ্বাসের কারণ জানতে চাইলে রহস্য করে বললেন, ‘যাঁরা চাপ সৃষ্টি করে, তাদের টিম তো এবার সবচেয়ে ভালো। আম্পায়ারদের সাহায্য অত দরকার হবে না।’ ইঙ্গিতটা সাকিব-তামিমকে নিয়ে শক্তিশালী দল গড়া আবাহনীর দিকেই। প্রিমিয়ার লিগের আম্পায়ারিং নিয়ে আম্পায়ার্স কমিটিকে এবার একটু বাড়তি সতর্কই মনে হচ্ছে। ম্যাচ রেফারি ও আম্পায়ারদের লিগ-পূর্ব ব্রিফিংয়ে আজ সেই সতর্কবার্তাই জানিয়ে দেওয়ার কথা। দেশে লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ হয় শুধু প্রিমিয়ার লিগে, বাজে আম্পায়ারিংয়ের কারণে যেন এর মর্যাদা ক্ষুণ্ন না হয়—আম্পায়ার্স কমিটির বার্তাটা থাকবে এ রকমই। বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটির সদস্যসচিব সয়লাব হোসেনও সে রকমই আভাস দিলেন, ‘বোর্ড সভাপতির কাছ থেকেই কঠোর নির্দেশ আছে, যেকোনো মূল্যে যেন এবার সুষ্ঠু আম্পায়ারিং হয়। চাকার ধরা আর আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে আমরাও কঠোর অবস্থানে আছি। আমার বিশ্বাস, আম্পায়ারদের নিয়ে এবার কেউ অভিযোগ তোলার সুযোগ পাবে না।’

No comments

Powered by Blogger.