এখন না কব কথা by রাসেল মাহমুদ

অতঃপর কৌতুক অভিনেতার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেল সুকণ্ঠী গায়িকার। অথচ কী মহাসমারোহে ধুমধাম করে ভারতীয় রীতিতে বিয়েটা হয়েছিল। বিয়েতে হাতি-ঘোড়া-উট ছিল। ছিল বাজিগর, সাপুড়ে, নর্তকী আর গান-বাদ্য। একেবারে সেই পৌরাণিক কাহিনির মতো জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। কৌতুক অভিনেতা রাসেল ব্র্যান্ডকে নিয়ে ভারতে বেড়াতে এসেছিলেন আয়ত-নয়না কেটি পেরি। এখানকার রীতি ও লোকাচারে মুগ্ধ হয়ে দুজনে সিদ্ধান্ত নেন বিয়েতে এগুলোর সবই থাকা চাই। ২০১০ সালের সেই বিয়ে পরের বছরের শেষেই ভেঙে গেল। গত সপ্তাহে তাঁকে নিয়ে শোরগোল। পশ্চিমা গণমাধ্যমের ক্যামেরায় অরল্যান্ডো ব্লুমকে বাহুবন্দী করে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে ক্যালিফোর্নিয়ার কোচেলা উৎসবে। শিল্পকর্ম ও সংগীতের এই উৎসবে শিল্পী কেটি পেরি গান করেছেন কি না তারও থেকে বড় খবর ছিল সেটি। তবে ৩১ বছরের এই তরুণী ইতিমধ্যে সংগীত জগতের খবর হয়েছেন বহুবার। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন কেটির শিক্ষিকা ক্লাসে একটি বোর্ড বানিয়ে আনতে বলেছিলেন। বড় হয়ে যে যা হতে চায়, তারই একটা প্রতিচ্ছবি থাকবে সেই বোর্ডে। বিভিন্ন ম্যাগাজিন কেটে ‘জীবনের লক্ষ্য’ বোর্ডটি বানিয়েছিল কেটি। সেই বোর্ডে ছিল গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড হাতে লাতিন গায়িকা সেলেনার ছবি। এ ঘটনার ঠিক ১৫ বছর পরের কথা। সেরা নারী পপ গায়িকা হিসেবে গ্র্যামির জন্য মনোনয়ন পান কেটি পেরি। বিশ্বব্যাপী তখন লোকের কানে বাজছে তাঁর গান ‘আই কিস্ড আ গার্ল’। কেটির ওয়ান অব দ্য বয়েজ অ্যালবামের ওই গানটি ছাড়াও ‘ইউআর সো গে’ গানটিও দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এমনকি ম্যাডোনার মতো শিল্পী গানটির প্রশংসা করেছেন। ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে ছিলেন কেটি পেরি। এমটিভির মতো চ্যানেলগুলো দেখা তো দূরের কথা, রক ও জনপ্রিয় ধারার গান শোনাও বারণ ছিল ঘরে। বড়জোর ‘সিস্টার অ্যাক্ট’ ঘরানার গান শুনলে বাবা-মা কিছু বলতেন না। অথচ সেই মেয়ে লিখে ফেললেন ব্যতিক্রম যৌনানুসন্ধানী এক গান। পরে অবশ্য সমপ্রেমী অধিকার আন্দোলনেও জড়িয়েছেন এই শিল্পী। যদিও তিনি সমপ্রেমী নন। কেটির প্রথম একক গান ‘আই কিস্ড আ গার্ল’ তাঁকে এনে দেয় খ্যাতির মুকুট। প্রকাশের পর টানা সাত সপ্তাহ বিলবোর্ডের এক শ গানের তালিকার ১ নম্বরে ছিল গানটি। সারা বিশ্বে ছয় মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয় এই একটি গান। গানটির ভিডিওর জন্য এমটিভির সেরা নবাগত শিল্পীর পুরস্কার, ২০০৯ সালে জনপ্রিয় পপ গান হিসেবে ‘পিপল চয়েস’ পুরস্কার জেতেন কেটি। ২০০৮ সালে মাইস্পেসে সর্বাধিক দেখা ভিডিও এটি। এ ছাড়া এই গান তাঁকে এনে দেয় বহু পুরস্কার, সম্মাননা ও পরিচিতি। একই সঙ্গে রূপবতী, আবেদনময়ী ও সুকণ্ঠী বলে কেটি পেরি চট করেই সবার নজরে পড়ে যান। আর নিরীক্ষাধর্মী সাজপোশাক তাঁকে মঞ্চে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। নয় বছর বয়স থেকে গান ও তেরো বছর বয়সে গিটার শিখতে শুরু করেন তিনি। সংগীতে ক্যারিয়ার করার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি তিনি। ২০০১ সালে কেটি হাডসন নামে একটি অ্যালবাম করেন এবং ব্যর্থ হন। অ্যালবামটি নিয়ে এন্টারটেইনমেন্ট উইকলিকে তিনি বলেছিলেন, বড়জোর শ খানেক লোকের হাতে পৌঁছায় সেটি। তারপর ওই লেবেল কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়। পরে নাম বদলে তিনি হয়ে যান কেটি পেরি। ‘ফায়ারওয়ার্ক’, ‘ক্যালিফোর্নিয়া গার্ল’, ‘ডার্ক হর্স’, ‘আম স্টিল ব্রেদিং’, ‘রোয়ার’-এর মতো গানগুলোর আগ পর্যন্ত ভীষণ চড়াই-উতরাই পেরোতে হয় তাঁকে। ১৭ বছর বয়সে প্রযোজক ও গীতিকার গ্লেন ব্যালার্ডের সঙ্গে কাজ করতে লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে যান। সেখানকার পাঁচটি বছরের বর্ণনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘টাকাপয়সার ভীষণ টানাটানি যাচ্ছিল। বাসাভাড়া দেওয়ার জন্য কখনো টাকা ধার করেছি, কখনো নিজের জামা বিক্রি করে দিয়েছি। গানগুলো বাজারে আনতে একটা রেকর্ড কোম্পানি খুঁজে পাইনি সেদিন।’ ২০০৭ সালে ক্যাপিটল-এর সঙ্গে চুক্তির পর কষ্টের দিন শেষ হয় তাঁর। এখন রেকর্ড কোম্পানিকে তিনি বলেন, এখন না কব কথা। তাদের দেওয়ার মতো সময় আছে নাকি?

No comments

Powered by Blogger.