মেসির আরেকটি মাইলফলক

মেসি আজ ছিলেন এমনই দুরন্ত, দুর্বার
ম্যাচের তখনো মিনিট তিনেক বাকি। তিনি ঘেমে নেয়ে একশা। প্রতিটা মুহূর্ত নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার সাক্ষী হয়ে আছে ঘামে ভেজা জার্সি। বাহুতে ঢিলে হয়ে যাওয়া অধিনায়কের ব্যান্ডটা টেনে তুললেন। ​কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন বড় করে ‘সি’ লেখা ব্যান্ডটার দিকে। লিওনেল মেসি এমন ভালোবাসা নিয়ে তাকান শুধু আন্তোনেলা রোকুজ্জোর সঙ্গে। এমন স্নেহময় দৃষ্টি পায় কেবল তাঁর দুই সন্তান। জাতীয় দলের হয়ে তাঁর শিরোপা না জেতা নিয়ে কম তো আর লেখা হলো না। এ যেন এক অমীমাংসিত রহস্য। জটিল এক ধাঁধা। পরপর দুই বছর বড় দুটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেও শিরোপা জিততে না পারার দায় পুরোটাই নিতে হয় তাঁকে। বাকিদের পুঞ্জীভূত ব্যর্থতার ভারও। বইতে হয় পুরো জাতির প্রত্যাশা। সে​ই ভার বয়ে নিতে নিতেই মেসি আজ একটা মাইলফলক ছুঁয়ে ফেললেন। জাতীয় দলের হয়ে ৫০তম গোল। বলিভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ২৯ মিনিটে পেনাল্টি থেকে করা গোলে ফিফটি করে ফেললেন অনেকের মতেই সর্বকালের সেরা এই ফুটবলার। দলও জিত​ল ২-০ গোলে। উঠে এল পয়েন্ট টেবিলের তিনে। সব মিলে মেসির জন্য দারুণ তৃপ্তির এক রাত গেল করদোবায়। আর্জেন্টিনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডটিও নিশ্বাস দূরত্বে। ৫৬ গোল নিয়ে সবার ওপরে বাতিস্তুতা। বাতিগোল অবশ্য ম্যাচ খেলেছিলেন ৭৮টি, সেখানে আজ ছিল মেসির ১০৭তম ম্যাচ। যদিও আর্জেন্টিনার হয়ে পুরোদস্তুর ফরোয়ার্ডের ভূমিকা মেসি খুব কমই পেয়েছেন। এখন তো আরও বেশি করে গোলদাতার চেয়ে গোল-কারিগরের ভূমিকায়। তবে এবার শুরু থেকেই বাছাই পর্বে যেন অন্য এক মেসিকে দেখা যাচ্ছে। নেইমার-সুয়ারেজ আসার পর বার্সেলোনায় অনেকটা চাপ কমেছে তাঁর ওপর। সেই সুযোগে পাওয়া বাড়তি প্রাণশক্তিটা যেন আর্জেন্টিনাকেই দিচ্ছেন। ক্লাবের জার্সি গায়ে তাঁর সেই বিখ্যাত সলো রান, একাই বল নিয়ে টানা ড্রিবল করে এঁকেবেঁকে যাওয়ার দৃশ্যটা কমে এসেছে। কিন্তু চিলি ম্যাচের পর আজ বলিভিয়ার বিপক্ষে একাধিকবার দেখা গেল সেই শিল্পিত দৌড়। আজ যেন মেসি একটু বেশিই উদ্দীপ্ত ছিলেন। বক্সে তিনবার হেড করার জন্য লাফিয়েছেন, এও তো মেসির জন্য বিরল। তিনটি দুর্দান্ত ফ্রি কিক। তিনটিতেই গোল হতে পারত। কিন্তু বাকি সব খেলোয়াড়ের তুলনায় ‘বেমানান’ অবিশ্বাস্য সেভগুলো করলেন বলিভিয়া গোলরক্ষক। না হলে হয়তো হ্যাটট্রিকটাও হয়ে যেত! তা না হোক। মেসি এখন এসবের থোড়াই হিসেব করেন। হ্যাটট্রিক, জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড—এসবে তাঁর মোটেও আগ্রহ নেই। তাঁর আগ্রহের, আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রে আছে যেটি, সেই আরাধ্য ট্রফি জেতার সুযোগ আবারও এ বছর পাচ্ছেন। ২০১৬ কোপা আমেরিকায়। আর ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ তো আছেই।

No comments

Powered by Blogger.