হারতে বসা ব্রাজিলের নাটকীয় ড্র

দানি আলভেসের গোল নাটকীয় ড্র এনে দিয়েছে ব্রাজিলকে।
আগের ম্যাচে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়া যদি চূড়ান্ত হতাশার হয়ে থাকে, এদিন ব্রাজিল সমর্থকদের জন্য এল অনেকটা স্বস্তির খবর। এবার ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা দল যে নাটকীয় ড্র করেছে প্যারাগুয়ের সঙ্গে। ৭৮ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচে হারতে বসা ব্রাজিল শেষ প্রান্তের দুই গোলে গুরুত্বপূর্ণ ১ পয়েন্ট তুলে নিয়েছে প্যারাগুয়ের মাঠ থেকে। গত ম্যাচে নিজে সমালোচনার শিকার হয়ে ক্লাব সতীর্থ নেইমারকে আগলে রাখা দানি আলভেস যোগ করা সময়ে গোল করে এ দিয়েছেন এই ড্র।  দিনের আগে ম্যাচে বলিভিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে টানা তৃতীয় জয় নিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কক্ষপথে ফিরেছে আর্জেন্টিনা। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে গোল করেছেন আর্জেন্টিনার তারকাবহুল দলের অখ্যাত খেলোয়াড় মার্কাদো। অন্য গোলটি লিওনেল মেসির। পেনাল্টি থেকে করা এই গোলে মেসি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে করে ফেললেন গোলের ফিফটি। পয়েন্ট টেবিলের সেরা তিনে উঠে এসেছে আর্জেন্টিনা (১১ পয়েন্ট)। অবশ্য ব্রাজিল এখনো ছয়ে (৮ পয়েন্ট)। ৫১ মিনিটে করা কাভানির একমাত্র গোলে পেরুকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে উরুগুয়ে। পঞ্চম রাউন্ড শেষেও অনেককে অবাক করে দিয়ে শীর্ষে থাকা ইকুয়েডর এদিন কলম্বিয়ার কাছে হেরেছে ৩-১ গোলে। তারপরও অবশ্য উরুগুয়ের সঙ্গে তাদের পয়েন্ট সমান (১৩)‍। পয়েন্ট টেবিলের এক থেকে পাঁচে থাকা দলের মধ্যে ব্যবধান মাত্র তিন পয়েন্টের। আবার তিন থেকে সাতে থাকা দলেও তিন পয়েন্টেরই ব্যবধান। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল এবার যেন রোমাঞ্চকর এক বাছাই পর্বের আভাসই দিচ্ছে। অবশ্য এখনো ১২ ম্যাচ বাকি। পথ অনেক বাকি থাকলেও এই অঞ্চলে দুই ফেবারিট ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার শুরুটা কিন্তু একদমই ভালো হয়নি। গত অক্টোবরে বাছাই পর্বের ম্যাচে ম্যাচে দুই দলেরই যাত্রা শুরু হয়েছিল ০-২ গোলের অপ্রত্যাশিত হার দিয়ে। চোটের কারণে মেসিকে ছাড়াই প্রথম চার ম্যাচ খেলা আর্জেন্টিনা জিতেছিল মাত্র একটিতে। গত সপ্তাহে চিলিকে ২-১ গোলে হারানো আর্জেন্টিনা এদিন করদোবায় নিজেদের মাঠে বলিভিয়ার মুখোমুখি হলো। এমনিতে পুঁচকে প্রতিপক্ষ হলেও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের সর্বশেষ চার দেখাতেই আর্জেন্টিনার কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে এই বলিভিয়া। আর্জেন্টিনা অবশ্য ম্যাচের ১০ সেকেন্ডের মাথায় গোল পেতে বসেছিল। অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার শট বলিভিয়া গোলরক্ষক ঠেকানোর পর ফিরতি বলে লাভেজ্জি ক্রসবারে মেরে দেন। তবে এই উজ্জ্বল শুরুই আর্জেন্টিনাকে বাকি সময়টায় রসদ জুগিয়ে গেল। ২১ মিনিটে গোল করলেন গত ম্যাচের নায়ক মার্কাদো। হিগুয়েনের শট লাইন থেকে ক্লিয়ার করার পর এবার ফিরতি শটও ঠেকিয়েছিল বলিভিয়ার রক্ষণ। কিন্তু সেই ক্লিয়ারটি হলো গোললাইনের অনেক ভেতর থেকে করা হেডে। জাতীয় দলের হয়ে তিন ম্যাচেই দুই গোল পেয়ে গেলেন মার্কাদো, এই ফুলব্যাক যেন লজ্জাই দিচ্ছেন ক্লাবের গোলের বন্যা বইয়ে জাতীয় দলে হাপিত্যেশ করা হিগুয়েইন-আগুয়েরোদের। ২৯ মিনিটে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি-দুর্বলতাকে কাঁচকলা দেখিয়ে বাঁ পায়ের জোরালো শটে ৫০তম আন্তর্জাতিক গোল করেন অধিনায়ক। এই দুই গোলেই একদম একতরফা ম্যাচটি জিতল আর্জেন্টিনা। ব্রাজিল কিন্তু উল্টো ছবিটা দেখছিল। প্যারাগুয়ের সাজানো আক্রমণের ফাঁদে অসহায় দেখাচ্ছিল নেইমারকে-বিহীন ব্রাজিলকে
মেসি কাল পেলেন ৫০তম গোল।
। ৪০ ও ৪৯ মিনিটে দুই গোল খেয়ে বসার পর দুঙ্গাকে মনে হচ্ছিল পৃথিবীর অসহায়তম মানুষ। ৩৬-এর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা বুড়ো ফরোয়ার্ড রিদার্কো অলিভিয়েরা ৭৯ মিনিটে গোল করে নিভতে বসা দীপটা জ্বালিয়ে দেন। শেষ বাঁশির খানিক আগে বার্সা ডিফেন্ডার আলভেসের গোলে ড্র পায় ব্রাজিল। শীর্ষে থাকা উরুগুয়ের সঙ্গে ব্যবধানটাও​ মাত্র চার পয়েন্টের বলে এখনই ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তবে দুঙ্গার চাকরিটা এখনো ঝুলছে সুতোর ওপর।
 হলুদ কার্ডের খাঁড়ায় অধিনায়ক নেইমার এ ম্যাচে ছিলেন না। ছিলেন না ডেভিড লুইজও। এই দলটা নেইমারের ওপর কতটা নির্ভরশীল, সেটা বোঝা গেল আজ। বিশ্বের তারকা সব স্ট্রাইকারের জন্ম দেওয়া ব্রাজিলকে কি না বাঁচাতে হচ্ছে এই বিস্মৃত নাম আর ডিফেন্ডারকে!

No comments

Powered by Blogger.