ইস্তাম্বুলে বোমা হামলা ও আড়ালের কিছু কথা by নেয়ামত উল্লাহ

একটি মুসলিম দেশে, পশ্চিমা দেশের পর্যটকদের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার অর্থ কী? হামলাকারী সৌদি আরবে জন্মগ্রহণকারী একজন সিরিয়ান নাগরিকের পরিচয় ব্যবহারে কী ইঙ্গিত বহন করে?
হামলার লক্ষ্য এক ঢিলে দুই পাখি মারা: ইস্তাম্বুলের পর্যটকদের লক্ষ্য করে হমলা একটি সন্ত্রাসী আক্রমণ। তুরস্ক সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। হামলার কারণ শুধু একটি নয় বরং এর নানাবিধ কারণও রয়েছে। হামলার লক্ষ্য এক ঢিলে দুই পাখি মারা।
সৌদি আরব বা সিরিয়ার নাম হাইলাইট করার অর্থ কী?: আইএস কর্তৃক ইস্তাম্বুলে বোমা হামলাকারী সৌদি আরবে জন্মগ্রহণকারী একজন সিরিয়ান নাগরিক। বেশ কয়েক দিন থেকে সৌদি আরব এবং তুরস্কের সাথে সরকারি সম্পর্কোন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে। যখন এই ধারণা করা হচ্ছিল যে, দুই দেশ সিরিয়ার বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও সহযোগিতার পদক্ষেপ পরিকল্পনা করছে ঠিক এ সময়ে বোমা হামলা করে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের কিছুটা ফাটল সৃষ্টি করার চেষ্টা।
সিরিয়াকে সামনে নিয়ে আসার কারণ?: প্রথম থেকে তুরস্ক সিরিয়ানদের জন্য দরজা খুলে রেখেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২.৫ মিলিয়ন সিরিয়ান তুরস্কে অবস্থান করছে। তুরস্ক সরকার তাদের জন্য সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করে যাচ্ছে এমনকি সিরিয়ানদের কাজের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় সিরিয়ান নাগরিককে দিয়ে ইস্তাম্বুলে বোমা আক্রমণ করিয়ে সিরিয়ানদের অপরাধী হিসেবে সামনে এনে সুপরিকল্পিতভাবে তুরস্ক এবং সিরিয়ার নীতির বিরুদ্ধে একটি নৈতিক প্রভাব ফেলার ষড়যন্ত্র।
আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু কেন জার্মানিদের করা হলো? :ইস্তাম্বুলে পর্যটকদের ওপর হামলার প্রধান টার্গেট ছিল জার্মান পর্যটক। আক্রমণ এমন সময় করা হলো যে, ইইউ ও তুরস্কের মধ্যে সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের জন্য একটি চুক্তি হওয়ার পর্যায়ে এসেছিল। বোমা আক্রমণের আগের দিন জার্মান অর্থমন্ত্রী সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের জন্য তিন মিলিয়ন ইউরো সহযোগিতা করার ঘোষণা দেন। এর এক দিন পর জার্মানিদের ওপর বোমা হামলার অর্থ কী?
তুরস্ক ও ইইউ সম্পর্কে কী প্রভাব পড়বে?: নভেম্বরে প্যারিসে বোমা হামলার পর সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের ব্যাপারে নতুন করে ভাবা শুরু করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তুরস্ক তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সঙ্কট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তুরস্কে ইউরোপীয় ইউনিয়ন লোকদের লক্ষ্য করে হামলা নিশ্চয়ই এখন সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা আরো কঠিন হতে পারে। ইইউ আলোচনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। এ ধরনের আক্রমণ আলোচনা টেবিলে বিপরীত দিক থেকে একটি ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
তুরস্কের পর্যটন শিল্পকে ধ্বংস করা: গত বছর তুরস্কের সরকারি হিসাব অনুযায়ী তুরস্কে ৯ মিলিয়ন পর্যটক এসেছে। টার্কিশ এয়ারলাইন্সের হিসাব অনুযায়ী ইস্তাম্বুলের দুইটি এয়ারপোর্টে প্রতি ১৮ সেকেন্ডে একটি করে বিমান ওঠানামা করছে। পর্যটকদের জন্য এরকম একটি জনপ্রিয় দেশে বোমা হামলা করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কিছু নয়।
লক্ষ্য করার মতো আইএস সন্ত্রাসী সংগঠন এর আগে তিউনিসিয়া ও মিসরে পর্যটকদের লক্ষ্য করে বোমা হমলা করেছে। তিউনিসিয়াতে দুইটি হামলায় ৫৬ জন পশ্চিমা পর্যটক নিহত হয়েছে। এ কারণে তিউনিসিয়ায় অর্থনীতির বিশাল ক্ষতি হয়েছে।
ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া কি?: তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জেরুসালেম পোস্ট সংবাদপত্র হামলার বিষয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। নিবন্ধনে ইসরাইল ও তুরস্কের মধ্যে সম্পর্ক যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাভাবিক করার প্রতি জোর দেয়া হয়। তুরস্ক সরকার অর্থনৈতিকভাবে যেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার চেয়ে বেশি মসিবতে পড়তে হবে সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের।
লেখক : অধ্যয়নরত ইস্তাম্বুল ইউনির্ভাসিটি

No comments

Powered by Blogger.