বাংলাদেশ-পাকিস্তান টানাপোড়েন- কূটনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী?

বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর পাকিস্তান যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় দেশটি বাংলাদেশের প্রতি উসকানিমূলক আচরণ করছে বলে প্রতীয়মান হয়। ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মীকে সন্দেহজনক ঘোরাফেরার কারণে কিছু সময়ের জন্য আটক রাখার জের হিসেবে ইসলামাবাদস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মীকে যেভাবে অপহরণ করা হয়েছিল, তাকে ন্যক্কারজনকই বলা চলে। ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মীকে আটকের পেছনে যুক্তি ছিল এবং আটকের পর তার দেহ তল্লাশি করার পর সেই যুক্তির সারবত্তা মিলেছে। তার কাছে তিন হাজার ভারতীয় রুপি পাওয়া গেছে, উপরন্তু যে মোটরসাইকেলে তিনি ঘোরাঘুরি করছিলেন, তাতে দূতাবাসের স্টিকার ছিল না। অধিকন্তু ছিল না ড্রাইভিং লাইসেন্স। অন্যদিকে পাকিস্তানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মীকে অপহরণ করা হয়েছে বিনা কারণে। দাফতরিক কাজ শেষে মেয়ের কোচিং সেন্টারে যাওয়ার পথে তাকে অপহরণ করে তার চোখ বেঁধে রাস্তায় ঘোরানো হয়েছে। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে পাকিস্তানের আচরণ অসৌজন্যমূলক শুধু নয়, উসকানিমূলকও।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কোনদিকে গড়াবে, তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী একই দিনে জাতীয় সংসদে বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে এখনই কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ভাবছে না সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য তার অধিকতর দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করে। সম্পর্ক অবনতির চূড়ান্ত মুহূর্ত ছাড়া কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। এমনও দেখা গেছে, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করলেও কূটনৈতিক সম্পর্কচ্ছেদ ঘটেনি। তবে এটা ঠিক, পাকিস্তান যদি ক্রমাগতভাবে উসকানিমূলক আচরণ চালিয়ে যেতে থাকে, তাহলে হয়তো বাধ্য হয়েই সম্পর্কচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে। এই যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এতবড় হত্যাযজ্ঞের পরও আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুযায়ী আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছি। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে পাকিস্তান তার পরাজয়ের স্মৃতি ভুলতে পারেনি। মাঝে মাঝেই দেশটির বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ এমন সব কথা বলে, যা মুক্তিযুদ্ধের অবমাননার শামিল, যদিও সেখানকার সাধারণ মানুষসহ অনেক সংগঠন, সংস্থা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে থাকেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতি আমাদের আবেদন থাকবে, অযথাই দুদেশের সম্পর্কে যেন তিক্ততার সৃষ্টি না করেন তারা। বিশ্বায়নের এ যুগে আমরা সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কই বজায় রাখতে চাই। এ সদিচ্ছার মূল্য না দিলে বাধ্য হয়েই হয়তো তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে আমাদের।

No comments

Powered by Blogger.