নিপারের জন্য লড়াই

কুর্স্কের বাঁকে জার্মান-ফ্যাসিস্ট ফৌজের পরাজয়ের ফলে সোভিয়েত-জার্মান রণাঙ্গনে শক্তির অনুপাত আরও বেশি বদলে যায় এবং তাতে সোভিয়েত সশস্ত্র বাহিনী লাভবানই হয়। কুর্স্কের লড়াইয়ে জার্মানরা বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১৯৪৩ সালের আগস্টের শেষদিকে সোভিয়েত-জার্মান রণাঙ্গনে অবস্থিত ২২৬টি জার্মান ডিভিশনের মধ্যে (তাতে ২৬টি ট্যাংক ও মোটোরাইজ্ড ডিভিশন ছিল) অধিকাংশ ট্যাংক ডিভিশন ও এক-তৃতীয়াংশ ইনফেন্ট্রি ডিভিশন পূর্ববর্তী লড়াইগুলোতে যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সোভিয়েত পার্টিজানরা নিরবচ্ছিন্নভাবে জার্মান যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর হামলা করছিল। নাৎসি সর্বোচ্চ সেনাপতিমণ্ডলী সমগ্র রণাঙ্গনে প্রতিরক্ষায় লিপ্ত হতে বাধ্য হয়। ফ্যাসিস্ট নেতারা যে কোনো উপায়ে ইউক্রেনে এবং বিশেষত দনবাসে টিকে থাকতে চেষ্টা করছিল। জেনারেল-ফিল্ডমার্শাল কেইটেল বলেছিলেন, দনবাস ও মধ্য ইউক্রেন বেদখল হলে গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরগুলো হাতছাড়া হবে; খাদ্যদ্রব্য, কয়লা, বিদ্যুৎ শক্তি ও কাঁচামালের উৎসগুলো খোয়া যাবে। জার্মান-ফ্যাসিস্ট বাহিনীকে হুকুম দেয়া হয়েছিল, ভেলিজ, ব্রিয়ানস্ক, সুমি যুদ্ধসীমায়, উত্তর দনেৎস ও মিউজ নদী বরাবর অবস্থানগুলো দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে হবে। অভ্যন্তর ভাগে গঠিত হচ্ছিল স্ট্র্যাটেজিক প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধসীমা ‘পূর্ব বাঁধ’। এটি গঠিত হচ্ছিল নার্ভা নদী, পস্কভ, ভিতেব্স্ক, ওর্শা শহর, সজ নদী, নিপারের মধ্যাঞ্চল ও মলোচনায়া নদীর লাইনে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছিল নিপারের উঁচু ডান তীরের সুদৃঢ় ঘাঁটিগুলোর ওপর। নাৎসিদের হিসাব মতে, সোভিয়েত সৈন্যদের জন্য ওই ঘাঁটিগুলো ছিল অনতিক্রম্য বাধা।
কিন্তু এবার এর কিছুই সোভিয়েত সশস্ত্র বাহিনীর প্রবল আক্রমণ অভিযান রুখতে সক্ষম ছিল না। মস্কো, স্তালিনগ্রাদ ও কুর্স্কের উপকণ্ঠে অর্জিত বিজয়ে অনুপ্রাণিত এবং দেশের অভ্যন্তর ভাগ থেকে রণাঙ্গনে অজস্র ধারায় নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রেরিত নতুন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত লালফৌজ আক্রমণ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিল, পশ্চিমাভিমুখে অবিরাম শত্রুকে তাড়া করছিল।
অনুবাদ : বিজয় পাল

No comments

Powered by Blogger.