দাবি আদায়ে অনড় শিক্ষকরা- দফায় দফায় বৈঠক, কর্মবিরতি অব্যাহত

স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোসহ ৫ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চালিয়ে যেতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন শিক্ষকরা। অন্য দুইদিনের মতো গতকালও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছিল কার্যত অচল। শিক্ষকরা বলছেন, দাবি পূরণে এখনও সরকার কোনো আশ্বাস দেয়নি। অন্যদিকে বুধবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের বৈঠক হলেও গতকাল আলোচনা বা সমাধানের কোনো উদ্যোগ  দেখা যায়নি। একদিন আগের বক্তব্যের থেকে সরে এসেছেন শিক্ষামন্ত্রী। গতকাল একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বলেছেন, শিক্ষকদের আন্দোলন খুব জটিল পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। গতকাল পর্যন্ত আলোচনা বসায় কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। ফেডারেশনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছেন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় আলোচনা বসায় একটি উদ্যোগ নিতে পারে। তবে এই বসা না বসা নির্ভর করছে আমলাদের সঙ্গে বসা না বসার উপর। আন্দোলনরত শিক্ষকদের একটি বড় অংশ আমলাদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি নয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় উদ্যোগ নিলে কিছুটা নমনীয়তা দেখাতে চান শিক্ষকরা। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শিক্ষকদের নমীয়তাও দেখতে চান।  আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তিন দফা দাবি না মানা পর্যন্ত্ত শিক্ষকদের এই লাগাতার কর্মবিরতি চলতেই থাকবে। তারা দাবি পূরণ করলেই শিক্ষকরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফিরে যাবেন।
আন্দোলন শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারের তরফে আলোচনার কোনো উদ্যোগ গতকাল বুধবার পর্যন্ত দেখা যায়নি। মঙ্গলবার বিকালে কেবল শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ব্যক্তিগতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের শীর্ষ দুই নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে ওই বৈঠক কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল না। সেখানে স্বাভাবিকভাবেই কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, তারা ক্লাসে ফিরতে চান। তাদের দাবি যদি আজকে (গতকালই) মেনে নেয়া হয়, তাহলে তারা আজকেই ক্লাসে ফিরে যাবেন। এখন পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে কোন যোগাযোগ হয়নি। তিনি বলেন, কিছু গণমাধ্যমে বেরিয়েছে শিক্ষকরা তাদের দাবি থেকে পিছিয়ে এসেছেন যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি বলেছেন, অর্থমন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এটা সম্ভব হবে না। তাহলে তারা ধরে নেবেন, তাদের আন্দোলন যদি দির্ঘায়িত হয় কিংবা দাবি না মানা হয়, তাহলে এর পেছনে অর্থমন্ত্রীর হাত আছে। শুধু অর্থের জন্য তারা আন্দোলন করছেন না। বিশ্ববিদ্যাল শিক্ষক হিসেবে যে মর্যাদা দরকার সেই মর্যাদার জন্য তারা আন্দোলন করছি।
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনে সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, শুধু অর্থের জন্য আমরা আন্দোলন করছি না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে যে মর্যাদা দরকার সেই মর্যাদার জন্য আমরা আন্দোলন করছি। তাদের দাবি মানা হলে এ আন্দোলন থেকে সরে আসবেন বলে এ সময় তিনি জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীতো আমাদের কথা শুনলেন না, তিনি সচিবদের কথা শুনেছেন। আমাদের কথাগুলো আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলতে চাই। আমরা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে বললেই তিনি আমাদের সমস্যাগুলো সহজে বুঝতে পারবেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছি। কিন্তু, একটি মহলের কারণে সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছি না। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন করে হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দীর্ঘ আট মাস অপেক্ষা করেছি, এই লাগাতার আন্দোলনের যাওয়ার আগেও ৯ দিন অপেক্ষা করেছি। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আমরা আন্দোলনে আসতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন, সরকারের নীতি-নির্ধারকদের সাথে এখনও পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি। একটা বৈঠক হলে সমস্যার সমাধান হবে। আমরা চাই ক্লাসরুমে থাকতে, বাইরে থাকতে চাই না।
ইবি প্রতিনিধি জানান, ফেডারেশনের ডাকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের তৃতীয় দিন পার করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের মতো বুধবারও কোন শিক্ষক ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণ করেননি। এদিন শিক্ষকদের উপস্থিতিও ছিল সীমিত। যার দরুন অচল ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
শাবি প্রতিনিধি জানান, বেতন কাঠামোয় ‘বৈষম্য ও অসঙ্গতি’ নিরসণের দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতির তৃতীয় দিনে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শাহ্‌জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। লাগাতার কর্মবিরতিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে বিশ্ববিদ্যালযের কোন বিভাগে কোন ক্লাস হয়নি, পরীক্ষাও নিতে দেখা যায়নি কোন বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল করলেও ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক দিনের তুলনায় অনেক কম।
বাকৃবি প্রতিনিধি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একাংশ।

No comments

Powered by Blogger.