হে বন্ধু বিদায়, হে মহান বীর বিদায়- জেনারেল জ্যাকবের প্রয়াণ

বিদায় বন্ধু বিদায়। বাংলাদেশ তার মহান স্বাধীনতা আন্দোলনে অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালনকারী জেনারেল জে এফ আর জ্যাকবকে হারাল। ৯২ বছর বয়সে দিল্লিতে তিনি গতকাল সকালে পরলোকগমন করেছেন। বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার ও জনগণ তাঁর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। জ্যাকব ছিলেন বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম মানবতাবাদী বন্ধু। তিনি বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন। এই ভূখণ্ডের মানুষের প্রতি তাঁর অনুরাগের প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে, যখন তিনি তাঁর সেনাদল নিয়ে বার্মা ফ্রন্টে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি সব সময় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশি জনগণের সাফল্য ও অগ্রযাত্রা কামনা করেছেন। আমরা হারালাম এমন একজন বিদেশি বন্ধুকে, যঁার হৃদয়ে সব সময় জাগরূক থেকেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বড় কোনো সাফল্যের খবরে তাঁর মুখে আমরা অনাবিল হাসি দেখেছি।
জ্যাকব ছিলেন সেসব শ্রদ্ধাভাজন ভারতীয় সেনানায়কের অন্যতম, যিনি একাগ্রচিত্তে একটি পরম সত্য কোনো প্রকারের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই উচ্চারণে বরাবর অকপট থেকেছেন যে মুক্তিযোদ্ধারাই বাংলাদেশিদের স্বতঃপ্রণোদিত সমর্থনে বাংলাদেশ ছিনিয়ে এনেছেন। ভারতীয় বীর যোদ্ধারা তঁাদের সহায়তা দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট কমান্ডের অধীনে কিংবদন্তিতুল্য ভূমিকা পালন করে যে কজন বীর ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন, জেনারেল জ্যাকব তঁাদের অন্যতম। বিশেষ করে ‘ঢাকার পতন’ ঘটাতে তিনি এক অবিস্মরণীয় স্ট্র্যাটেজিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে রেসকোর্স ময়দানে জেনারেল নিয়াজি ও জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার মধ্যে ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানটি সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি ছিলেন এর অগ্রগণ্য ব্যবস্থাপক। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে তিনি মধ্য ডিসেম্বরে ঢাকায় পা রাখেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরেই আত্মসমর্পণ নিশ্চিত করতে তিনি মাঠপর্যায়ের মুখ্য রূপকার হয়ে উঠেছিলেন।
যত দিন বাংলাদেশ টিকে থাকবে, জ্যাকব ও তাঁর বর্ণাঢ্য স্মৃতি তত দিন ভাস্বর হয়ে থাকবে। আমরা এই বীরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।

No comments

Powered by Blogger.