ওবামার সাত বছরে যুক্তরাষ্ট্র কী পেল?

ক্ষমতার শেষ বছরে পা রেখে সর্বশেষ স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণ দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। গত সাত বছরে ওবামা তার সাফল্যের খতিয়ানের চেয়ে সমুজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখালেন। বহুত্ববাদী গণতন্ত্র, সবুজ জ্বালানি ও ক্ষমতার পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে তিনি তার ‘সুস্পষ্ট ভিশন’ বাস্তবায়নে জোর দিলেন। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের নতুন দিগন্তে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এগিয়ে যাবে- তার দাওয়াই দিতে গিয়ে বললেন, প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলকে ক্রুশবিদ্ধ করে পথের বাধা দূর করতে।
সম্প্রতি রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী টেড ক্রুজ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করেই তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন। মুসলমানদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ‘কার্পেট বোম্বিং’ প্রচারণাকে টার্গেট করেছেন ওবামা। কিন্তু মূল কথা হচ্ছে, ট্রাম্প বা টেড ক্রুজ নয়, রিপাবলিকানদের ক্ষমতায় আসা ঠেকাতে চান তিনি। ওবামার শাসনামলে প্রণীতি নানাবিধ নীতিকৌশলের সরাসরি বিরুদ্ধে রিপাবলিকান। কিছু ক্ষেত্রে নিজের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে ওবামা আইন বানিয়েছেন। মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানের কাছে কংগ্রেসের আধিপত্য হারিয়ে আরও ‘নিঃসঙ্গ ক্ষমতাধর’ হিসেবে আবির্ভূত হতে হয়েছে তাকে। শেষ সময়ে এসে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, অনেক ‘প্রত্যশার স্পর্ধা’ দেখিয়ে ওবামার হোয়াইট হাউস গমনের পর এতদিনে কী পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্লুমবার্গ নিউজ ও ফ্যাক্ট চেক অবলম্বনে সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হল।
অপরাধ ও অস্ত্র
বেশ আগে থেকেই আমেরিকায় গোপন হত্যা ও খুন-খারাবি চলে আসছে। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জনাকীর্ণ স্থানে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ, কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা ও বন্দুকের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম ও জাতীয় বিতর্কের বিষয় হয়ে আছে। কিন্তু ওবামা ক্ষমতা নেয়ার পর কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে এসব সহিংস তৎপরতার? ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এফবিআই’র বার্ষিক অপরাধ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে ওবামার নির্বাচিত হওয়ার বছরে খুন-খারাবির তুলনায় ২০১৪ সালে ২২১৬টি কম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। খুনের বাইরে অন্যান্য সহিংস অপরাধ যেমনÑ ধর্ষণ, ডাকাতি, হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ২০০৮ সালের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম হয়েছে। ২০১৪ সালের তুলনায় ওই বছরে এসব অপরাধের ২,২৯,০৭৮টি ঘটনা বেশি ছিল। ২০০৮ সালে প্রতি ১০ হাজার অধিবাসীর মধ্যে খুনের ঘটনা ছিল ৫.৪ শতাংশ। বর্তমানে তা কমে ৪.৫ শতাংশ হয়েছে। তবে এই সময়ে এসে আমেরিকায় অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ১ কোটি ৪২ লাখ বন্দুক বেশি বিক্রি হয়েছে। বিভিন্ন বন্দুক সহিংসতার জের ধরে শেষ পর্যন্ত ওবামা নির্বাহী আদেশে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছেন।
কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব
ওবামার দায়িত্ব গ্রহণের পর মার্কিন অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে ৯২ লাখ ৬৫ হাজার মানুষের। তবে বিল ক্লিনটনের সময় নতুন কর্মসংস্থানের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ। এমনকি ওবামার আগের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় তার চেয়ে ১৩ লাখ কর্মসংস্থান বেশি হয়েছিল। যদিও দু-দুটো মন্দার পর ক্ষমতা পেয়েছিলেন ওবামা। বেকারত্বের হার কমানোর দিক দিয়ে ওবামা সফলতা পেয়েছেন। ক্ষমতায় আসার বছরে বেকারত্বের হার ছিল ৭.৮ শতাংশ। বর্তমানে তা কমে গিয়ে ৫ শতাংশে নেমেছে। ১৯৪৮ সালের এটি সর্বনিু বলা হচ্ছে।
বাজার-মুনাফা ও ভোগ্যপণ্যের দাম
কর্পোরেট মুনাফা ওবামার শাসনামলে গর্জন করে উঠেছে। ওবামার করবিষয়ক নীতি এক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রমাণিত হয়েছে। গত সাত বছরে ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে ১.৯ শতাংশ, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের গড় বৃদ্ধির অর্ধেকের চেয়েও কম। এ সময়ে আমেরিকানদের সাপ্তাহিক ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা
ওবামার বিশেষ স্বাস্থ্যনীতিতে উপকৃত হয়েছে মার্কিনিরা, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণীরা। ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য বীমার বাইরে ছিল ৪ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ। বর্তমানে যা মাত্র ১ কোটি ৫৩ লাখ।
জ্বালানি
যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত তেল উৎপাদন সম্প্রতি কমে গেলেও ওবামার শাসনে আগের তুলনায় দ্বিগুণ তেল উৎপাদন করা হয়েছে। তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারের বেশি থেকে বর্তমানে মাত্র ৩৬ ডলারে নেমে আসায় তেল উৎপাদন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ওবামা আমদানি তেলের ওপর নির্ভরতা অর্ধেক কমিয়ে এনেছেন। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার ২০০৮ সালের তুলনায় ২৭৩ শতাংশ বেড়েছে।
সরকারি ঋণ ও ব্যয়
ওবামার আমলে সরকারি ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে এর পরিমাণ ১৩.৬ ট্রিলিয়ন ডলার- যা ২০০৮ সালের তুলনায় ১১৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ব্যয় খুব একটা বাড়েনি। ২০০৯ সালের তুলনায় মাত্র ৪.৮ শতাংশ বেশি। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৩.৬৯ ট্রিলিয়ন ডলার।

No comments

Powered by Blogger.