যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমরা বিব্রত, ক্ষুব্ধ

ক্যালিফোর্নিয়ায় হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ করেছে
সান বার্নার্ডিনোর মুসলিম সম্প্রদায়। ছবিটি ৩ ডিসেম্বর, ২০১৫
সান ম্যানুয়েল স্টেডিয়াম থেকে তোলা। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় হামলার সন্দেহভাজন দম্পতির ব্যাপারে নানা তথ্য আসতে শুরু করেছে। ওই ঘটনায় দেশটির মুসলিম সম্প্রদায় বিব্রত, ক্ষুব্ধ। তাঁদের মধ্যে উৎকণ্ঠাও রয়েছে। তাঁরা হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনার সঙ্গে ধর্মকে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
গত বুধবার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান বার্নার্ডিনো কাউন্টির একটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে হামলা হয়। বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন ১৪ জন। আহত হয়েছেন ২১ জন।
পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন দুই সন্দেহভাজন হামলাকারী সৈয়দ রিজওয়ান ফারুক (২৮) ও তাশফিন মালিক (২৭)। পুলিশ বলছে, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী। তাঁদের ছয় মাসের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
রিজওয়ান যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। তাঁর স্ত্রী তাশফিনের জন্ম পাকিস্তানে। বিয়ের আগ পর্যন্ত সৌদি আরবে ছিলেন তিনি।
ইনল্যান্ড রিজিওনাল সেন্টারে হত্যাযজ্ঞের পর নানা প্রশ্নের উত্তর মেলানোর চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। হত্যাযজ্ঞ নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যমে চলছে নানা বিশ্লেষণ।
ওই দম্পতির সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না, এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত সংস্থাগুলো।
পুলিশ জানায়, ছয় মাসের কন্যাসন্তানকে নিকট আত্মীয়ের বাসায় রেখে হামলায় অংশ নেন ওই দম্পতি। তাঁদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
সন্দেহভাজন দম্পতির বাড়ি থেকে এত অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হওয়ায় নানা সন্দেহ দানা বেঁধেছে। আরও বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ওই দম্পতির ছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান সহজ অস্ত্র-নিয়ন্ত্রণ আইনের সুযোগে তাঁরা এত আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন বলেও আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
হত্যাকাণ্ডটি পূর্ব-পরিকল্পিত ছিল বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
হামলায় অংশ নেওয়ার আগে ওই দম্পতি কোনো বক্তব্য বা চিঠিপত্র রেখে যাননি। তদন্ত কর্মকর্তারা তাঁদের বাসা থেকে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক উদ্ধার করেছেন। সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
রিজওয়ান কাউন্টির কর্মচারী ছিলেন। কর্মস্থলে অসন্তোষের জেরে এ হামলা হয়েছে বলে যে ধারণাটি রয়েছে, তা ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
সহকর্মীদের ভাষ্য, তাঁরা রিজওয়ানকে কখনো সন্দেহজনক আচরণ করতে দেখেননি।
কোনো কোনো রক্ষণশীল গণমাধ্যম ওই দম্পতির ধর্ম-পরিচয়কে সামনে নিয়ে এসেছে।
সন্দেহভাজন হামলাকারীরা মুসলমান হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সম্প্রদায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও উৎকণ্ঠা।
যে মসজিদে রিজওয়ানের নিয়মিত যাতায়াত ছিল, সেখানকার লোকজনও তাঁর মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক আচরণ দেখার কথা জানাতে পারেনি।
হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাউন্সিল অব ইসলামিক রিলেশন্স অব আমেরিকা। তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার রহস্য উন্মোচনের দাবিও জানানো হয়েছে। হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে ইসলাম ধর্মকে না জড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছে কাউন্সিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। হত্যাযজ্ঞের পেছনে কী উদ্দেশ্য ছিল, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এই ধরনের হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.