বঙ্গোপসাগরের ওপর মিয়ানমারের দাবি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা

বঙ্গোপসাগরে আইনগতভাবে বাংলাদেশের আওতাধীন বিস্তীর্ণ একটি অঞ্চলের ওপর দাবি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে মিয়ানমার। বাংলাদেশ এর প্রতিবাদ জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমার বঙ্গোপসাগরের মহিসোপানের (কন্টিনেন্টাল শেলফ) একটি অংশ দাবি করে গত জুলাইয়ে জাতিসঙ্ঘের অধীন কমিশন অন দ্যা লিমিটস অফ দ্যা কন্টিনেন্টাল শেলফের (সিএলসিএস) কাছে আবেদন করে। এতে বাংলাদেশের এবং ভারতের আইনগতভাবে প্রাপ্য মহিসোপানও দাবি করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে সিএলসিএস যেন মিয়ানমারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে সেজন্য একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার তার সংশোধিত প্রস্তাবে বঙ্গোপসাগরের যে মহিসোপান দাবি করেছে তার মধ্যে ইতোপূর্বে ইটলস ও সালিসি আদালত কর্তৃক বাংলাদেশকে দেয়া অংশও রয়েছে। মিয়ানমারের দাবি ইটলস ও সালিসি আদালতের রায়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই সিএলসিএস যেন মায়ানমারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে। তা না হলে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে।
বাংলাদেশ ২০১১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সিএলসিএসে সমুদ্রসীমার দাবি উত্থাপন করেছে। ২১ সদস্যের জুরি বোর্ড এ দাবির নিষ্পত্তি করবে। এর আগে বাংলাদেশের আপত্তির মুখে সিএলসিএস সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের দাবি বিবেচনা স্থগিত রাখে।
২০০৮ সালে মিয়ানমার প্রথমবারের মতো বঙ্গোপসাগরের মহিসোপান দাবি করে সিএলসিএসে চিঠি দেয়। এরপর গত জুলাইয়ে মিয়ানমার আবার সংশোধিত দাবি পেশ করে একটি চিঠি দিয়েছে। মিয়ানমারের দেয়া দুটি দাবিরই প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
এদিকে বাংলাদেশ জার্মানির হামবুর্গে সমুদ্র আইন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে (ইটলস) মিয়ানমারের সাথে সুমদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২০০৯ সালে মামলা করে। একই বছর নেদারল্যান্ডসের হেগের স্থায়ী সালিসি আদালতে ভারতের সাথে সুমদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মামলা করে। ২০১২ সালে ইটলস ও ২০১৪ সালে সালিসি আদালতের রায়ে মিয়ানমার ও ভারতের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি হয়।
২০১২ সালের ৭ জুলাই ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে সালিসি আদালতের রায়ে বাংলাদেশ ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চল পেয়েছে। ভারতের সাথে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রাঞ্চল ছিল ২৫ হাজার ৬০২ কিলোমিটার। ২০১২ সালে ১৪ মার্চ সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে (ইটলস) মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি হওয়ার পর এ রায়ের ফলে বঙ্গোসাগরের এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চলের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১২ নটিকাল মাইল পর্যন্ত আঞ্চলিক সমুদ্র (টেরিটোরিয়াল সি), ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইইজেড) এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৮ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহিসোপানে অবস্থিত সকল ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের উপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.