চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ; সাংবাদিক সম্মেলনে হুইপের ব্যাখ্যা

চুয়াডাঙ্গায় সংঘটিত বৃহস্পতিবারের পুলিশ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষের ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজ বাসভবনে প্রকৃত ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন এবং এ ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে। জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার বলেন, “সাংবাদিক হিসেবে আপনারা সঠিক ও বাস্তব বিষয়টি তুলে ধরবেন। এতে সম্মানিত পাঠক সমাজ ও জাতি প্রকৃতার্থেই উপকৃত হবে।” সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার বলেন, “সাংবাদিকদের পাঠানো এবং সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত ও প্রচারিত সঠিক তথ্যাদির কারণে সংশ্লিষ্ট কার্যালয় ও আইন-আদালতের কার্যক্রম সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে তরান্বিত হয়।” হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেন, “এদিন রাতে তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় গিয়েছিলেন পুলিশের গুলি চালানোর কারণ জানতে। অর্থাৎ, কী কারণে এবং কার হুকুমে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল এই বিষয়টি জানান জন্য।” হুইপ সোলায়মান বলেন, পুলিশ সুপার রশীদুল হাসানকে নিজের মোবাইল ফোন থেকে ১১-১২ বার কল দিলের তার কল পুলিশ সুপার ধরেননি। সে কারণেই তিনি নিজে প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য থানায় গিয়েছিলেন। কারণ, প্রকাশ্যে আসামিদের পুলিশ পিকআপভ্যানে তোলার পর পুলিশ কীভাবে বলে তারা তাদের আটক করেনি। ঢাকার সূত্রাপুরে ঠিক এভাবেই ছাত্রলীগ এক নেতাকে তুলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ গুলি করে হত্যা শেষে লাশ ফেলে রেখে যায়। তারা কী কারণে ওই আসামিকে আটক করেও বললো আটক করেনি তা বোধগম্য নয়।”   তিনি আরো বলেন, “চুয়াডাঙ্গাকে অশান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ সুপার। হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও তাদের অজ্ঞাত কারণে আটক করা হচ্ছে না।” জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পৌর এলাকার সাতগাড়ী মহল্লার একটি বাড়িতে হামলার খবরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ওই সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে খালিদ ও আসাদ নামের দুই ছাত্রলীগকর্মীকে আটক করে পুলিশ পিকআপে তুলে নেয়। এদিকে দুই ছাত্রলীগকর্মীকে আটকের বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলামের কাছে ছাত্রলীগ নেতারা জানতে চাইলে তিনি কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। এ সময় থানার অফিসার ইনচার্জ ও দারোগাদের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়। একই সময়ে থানার সামনের রাস্তায় সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুদ্ধ ছাত্রলীগকর্মীরা রাস্তায় কয়েকটি ইজিবাইক ও রিকশা ভাঙচুর করে। থানার মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। এ অবস্থায় পুলিশ ৫-৭ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রলীগকর্মীদের থানার সামনের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ ও সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন থানায় উপস্থিত হন। থানায় উপস্থিত হয়ে তিনি পুলিশ সুপারের নিকট ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হন। পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় সদর থানায় সংক্ষিপ্ত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “আটক ছাত্রলীগ কর্মী খালিদ পাঁচটি মামলার আসামি। অপর ছাত্রলীগকর্মী আসাদ সম্পর্কে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ছাত্রলীগ কর্মীরা রাত প্রায় ১০টার সময় শহরের কোর্টমোড়ে পুলিশ পিকআপ লক্ষ করে এবং থানার মধ্যে ইটপাটকেল ছুঁড়েছে। থানা সামনের রাস্তায় দুটি বোমার বিস্ফোরণও ঘটিয়েছে।” চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন জানান, তিনি বৃস্পতিবার রাত ১০টার দিকে গাড়িতে চেপে সদর থানায় যাওয়ার সময় থানার প্রধান দরজার সামনে গাড়ি থেকে নেমে দেখতে পান অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেকের মোটরসাইকেলে চেপে হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনসহ বেশ কিছু দলীয় নেতাকর্মী থানায় আসেন। চুয়াডাঙ্গার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর পৌর এলাকার সাতগাড়ী গ্রামের নতুনপাড়ার বিশার ছেলে পাঁচটি মামলার আসামি খালিদ (২২) ও একই এলাকার সাঈদ রাজমিস্ত্রীর ছেলে আসাদ (২০) ও শহরের মসজিদ পাড়ার আসলামের ছেলে কানা রাসেলকে (২৩) আটক করা হয়। এদের মধ্যে পাঁচটি মামলার আসামি খালিদকে জেলা ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

No comments

Powered by Blogger.